ভেঙে পড়ে আছে রথ......।
‘রথ দেখা কলা বেচা’ কথাটা শুধু শহরে কেন গ্রামের মানুষকেও
হরবখত্ বলতে শুনতাম।ছোটবেলায় রথ দেখতে যেতাম।রথের মেলাও ঘুরতাম।সেখানে নানান জাতের
কলাও বেচতে দেখেছি মানুষজনকে।কলাগাছও বেচতে দেখেছি।কাঁঠাল বেচতেও দেখেছি তবু কেন
যে কেউ ‘রথ দেখা কাঁঠাল বেচা’ বলত না কেন কে জানে!তবে রথের সংগে দেখা ও বেচার যে
একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে সেটা সেই বয়সে না বুঝলেও পরে বুঝেছি।আচ্ছা ইংরাজিতে যে
‘উইন্ডো শপিং’ কথাটি চালু হয়েছে সেটা কি আমাদের ওই ‘রথ দেখা কলাবেচা’ থেকেই?
আমাদের গ্রামে চড়ক ছিল,গাজন ছিল,রাসের মেলা ছিল,দোলের মেলা
ছিল কিন্তু রথের মেলা ছিল না।বাড়ির বাস্তুদেবতা রঘুনাথকে ছোট্ট রথে চড়ানো হোত,ঝুলন
পূর্ণিমায় ঝুলায় দোলানোও হত কিন্তু রথের সেই জাঁকজমক ছিল না।তাই আমাদের রথের মেলা
দেখতে ছুটতে হোত এখানে ওখানে।পুরীর রথ যেমন বিখ্যাত।মাহেশের রথ-এর কথা যেমন
বঙ্কিমের উপন্যাস থেকে সবাই জানে আমাদের মহিষাদলের রথ তার চেয়ে কিছু কম নয়।মহিষাদলের
রথ রাজাদের ছিল এই সেদিনও এখন পঞ্চায়েতের।আগে ছিল সতের চূড়ার।রাজবাড়ি থেকে মাসির
বাড়ি আসতে কয়েক ঘন্টা লেগে যেত।পরে হোল তেরো চূড়ার।বড়ো হয়ে আমি মহিষাদলের রথের
মেলায় গেছি কবিতা বেচতে আর বাড়ির কাঁচা ও পাকা বিচিকলা বেচতে যেতাম রাধামনির হাটে
কি রঘুনাথবাড়ির রথের মেলায়।রঘুনাথবাড়ির রথও বেশ নামকরা ছিল।বেশ কয়েকদিন ধরে মেলা
বসত।নাগরদোলা থেকে ম্যাজিক,গাছ-গাছালি থেকে চপ-পাঁপড়, গজা থেকে মণ্ডা-মিঠাই সবই
থাকত।আমরা ডিমারীতেও মেলা দেখতে যেতাম। ডিমারীর হাটও বিখ্যাত ছিল।কাঁক্টিয়া,ডিমারী,রামতারক,হাকোল্লা,ব্যবত্তা,কলাতলা,
নিমতৌড়ি-বেগুনবাড়ির হাট পাট,পান আর ধান-চালের জন্য বিখ্যাত ছিল।আর রাধামনির হাট
সারা ভারতে বিখ্যাত রংসুতো-গামছা-মশারি-চাদরের জন্যে।এসব জায়গাতেও রথ টানা হোত তবে
তা তেমন নামকরা ছিল না যতটা ছিল ডিমারী,রঘুনাথবাড়ি,ময়না আর মহিষাদলের রথযাত্রা।তবে যেখানেই রথের মেলা বসুক না কেন আমরা সকাল থেকেই নিজেদের
হাতে বানানো তালপাতার ভেঁপু বাজাতাম। ছোট,বড়ো নানান মাপের।হাতে
তালপাতার ঘড়ি,চোখে তালপাতার চশমা আর মুখে পাতার ভেঁপু।আজকের ‘ভুভুজেলা’র থেকে তার
স্বর ছিল অনেক মিষ্টি।অনেক মধুর।
মোকাম কলিকাতায় এসে দেখলাম রথের মেলা নেই উলটে মেলা রথ।সবার
হাতে একটা করে রথ।ছোট-বড়-মাঝারি......অলিতে গলিতে এমনকি বড়ো রাস্তাও বাদ নেই।সব
কেমন একা একা আত্মকেন্দ্রিক।এখন যেমন পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতেই সেলফোনে একা একা চোখ
রাখা এও অনেকটা তেম্নিই।আর রেষারেষি......। আত্মম্ভরিতা......।তারপর দেখলাম স্বদেশী
রাস্তায় বিদেশী রথ।খেজুর পাতার ঝাঁটা আর নারকেল কাঠির ঝাঁটায় ঝ্যাঁটানোয় অভস্ত্য
আমি প্রথম দেখলাম সোনার ঝাঁটা। দেখলাম রথের উপরে বসে আছে জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলরাম এর
চেয়েও অধিক গুরুত্ত্বে এক ধর্মগুরু।রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে
ইস্কনের এই শোভাযাত্রা দেখে রবি ঠাকুরের লেখা নিজের অজান্তেই আওড়াতাম-‘রথ ভাবে আমি
দেব,রশি ভাবে আমি,মূর্তি ভাবে আমি দেব,হাসেন অন্তর্যামী’।গ্রামের রথের মেলায়
কিন্তু তা নয়। সেখানে রথের রশি সবাই টানে।রাজা থেকে আমজনতা,সন্ন্যাসী থেকে শূদ্র
সবাই তার অংশীদার।এই শোভাযাত্রা সবার মিলন মেলা।
দেশ গাঁয়ের মেলা মানেই মেলা লোক একটা জায়গায় জড়ো হয়ে বিড়ি
কি সিগারেট ফোঁকে আর এটা ওটা দেখে।কেউ ঘুরে ঘুরে দেখে।কেউ এক জায়গায় চুপটি করে বসে
লোকের মাথা গোনে আর চায়ের গেলাসে সশব্দ চুমুক দিয়ে বিড়িটায় শেষ টান দিয়ে পাশের
লোকটিকে বলে-‘বুইলে(বুঝলে)কি না এবারে তেমন লোক হয়নি’।পাশের লোকটি সেও চায়ের
গেলাসে আরও জোরে চুমুক দিয়ে ফতুয়ার পকেট থেকে বিড়ির বাণ্ডিল বের করে তার থেকে একটি
পাশের লোকটিকে দিয়ে আর নিজেও একটি নিয়ে বিড়িটাকে দুই আঙুলে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কানের
পাশে নিয়ে এসে আবার মুখের কাছে এনে ফুঁ দিয়ে তারপর পাশের লোকের কাছে
সালোই(দেশলাই)চেয়ে নিয়ে বিড়ির মুখে আগুন দিয়ে পরের বিড়ির মুখেও আগুন ধরিয়ে বিজ্ঞের
মতো বলে উঠত-‘কী যে কও জ্যানার পো,আমি তো দেখতিছি লোক থিক্ থিক্ করতিছে!ওই কাঁঠালের
ভুতির উপর যেমন ডেঁয়ো মাছি ভন্ ভন্ করতিছে।তেমনি লোক হচে(হয়েছে)ইবারের মেলায়’।এই
কথায় রথের মেলার স্থায়ী চায়ের দোকানে স্থানীয় ও মেলা উপলক্ষ্যে আগত মানুষ অবধারিত
ভাবে দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যাবে এবং গুন্তিতে মানুষের মাথা বেশি না কম এই নিয়ে তুমুল
তর্ক তুলবে।সেখান থেকে চলে যাবে মেলার জৌলুস হারানো নিয়ে আক্ষেপে,জিনিসের দাম বাড়া
নিয়ে চাপা বিক্ষোভে সেখান থেকে মেয়েদের পোশাক আশাক যে আর ঠিক ঠাক নেই সেই বিষয়ে
প্রকাশ্য ক্ষোভে।তার পাশাপাশি কে কার বাড়ির মেয়েকে কবে ফুঁসলে
নিয়ে গেছে সে কথায়।কে হঠাৎ করে বড়লোক হয়ে উঠল সে কথাও বাদ যাবে না। এমনকি কোন
চাতুরীতে একদিন তার ‘পোঁদ’ মেরে খাওয়া যায় তার ছক কষাও চলতে থাকবে।
অবশ্য এটা যে শুধু রথের মেলাতেই হয়ে থাকত তা কিন্তু নয়।সব
মেলা কি সব হাটেই এমন কিছু লোক ছিল তখন যারা নিছক আমোদ বা ক্লান্তিহীন পরচর্চা ও
পরনিন্দায় মশগুল থাকতে ভালোবাসত।মেলায় যেমন পসরা আসে।কেনাবেচার লোক আসে।এরাও
আসে।তবে এরা আর কোনও দোকানে নয়,চায়ের দোকানেই আসর জমায়।পাশের মনোহারীর দোকানে নয়,খুন্তি-কড়াই-শাবল-কোদাল-খুরপি-গাঁইতির
দোকানে নয়।মণ্ডা-মিঠাই-সন্দেশ-জিলিপির দোকানেও নয় এই চপ-চায়ের দোকানেই তাদের
আসন।এক এক সময় মনে হবে বসে থাকতে থাকতে এদের শিকড় গজিয়ে গেছে।এরা গাছ হয়ে গেছে।
রথের মেলার বৈশিষ্ট্য বলতে সবাই বোঝেন জুলাবি(জিলিপি)আর
পাঁপড় ভাজা।আমরা কিন্তু দেখেছি রথের মেলা মানেই ইয়া বড়ো বড়ো মালদার ফজলি
আম,স্থানীয় আনারস,দেশী কাঁঠাল আর নানান ফুল-ফলের গাছ।আর আসত পাখি।নানান জাতের
পাখি।পায়রা,টিয়া,চন্দনা,ময়না,বদ্রি,মুনিয়া,লাভ বার্ড যেমন থাকত খাঁচায় তেমনি
কাকাতুয়াও থাকত।গ্রামের মেলায় ম্যাকাও কি ময়ূর বেচতে দেখিনি তবে
বাঁদর-বেঁজি,ভালুক-কুকুর বেচতে দেখেছি। হাটেও মাছ-গাছ-পাখি বিক্রি হোতো।নানান
জাতের ফুল-ফলের চারা কি বীজ তাও থাকত কিন্তু রথের মেলায় কতো রকমের পাখি,কত জাতের
মাছ আর গাছ আসত।
বাবা প্রতি রথের মেলায় গাছ কিনত।বিশেষ করে আমগাছ,জামগাছ,পেয়ারা
গাছ, বাতাবি লেবুর গাছ।নারকেল কি সুপুরিগাছ কেনা হোত না আমাদের বাড়িতে।ওগুলো বাড়ির
নারকেল কি সুপুরি থেকেই হোত।ওগুলো রাখা হোত রান্নাঘরের জল যে নালা দিয়ে এসে একটা
ডোবায় পড়ত সেখানে।সেখানে গাছ বড়ো হলে তাদের লাগানো হোত।আর তালগাছ আপনা থেকেই
গজাত।আষাঢ়-শ্রাবণ ধান-পাট চাষ আর গাছ লাগানোর কাল।গুরুদেব এই ধারাকেই
শান্তিনিকেতনে উৎসবের আকার দিয়েছিলেন। বৃক্ষরোপন আর হলকর্ষন উৎসব বাংলার প্রচলিত
ধারার পরিশীলিত রূপ।শুধু দেশজ গাছ-লতাগুল্ম নয় সারা পৃ্থিবীর যেখানেই গেছেন সেখান
থেকে বীজ বা বৃক্ষ এনে তা শান্তিনিকেতনের মাটিতে রোপন করেছেন।সেইসব গাছ আজও
রয়েছে।তার পাশাপাশি তাঁরই অগোচরে যে সব বিষবৃক্ষ রোপিত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।তাঁর জীবব্দশাতেই
তারা চারা থেকে মহীরূহ হয়েছে।আজ তারাই সংস্কৃতে “এরণ্ডবি ধ্রূমায়তে”(যখন
ভ্যারেণ্ডা গাছও নিজেকে ধ্রূম(মহীরূহ)ভাবে)বাক্যটিকে নগ্ন বাস্তবের মাটিতে নিজেদের
প্রোথিত করে দূষিত করে চলেছে আশ্রমের আকাশ-বাতাস।
আমার জ্যাঠাবাবু প্রয়াত দুর্গাচরণ সরকার গুরুদেবের আদর্শকে
আশ্রয় করে বাঁচতে চেয়েছিলেন।আমাদের বাঁচাতে চেয়েছিলেন।তাই জ্যাঠাবাবু বাবার মতো এইসব
তুচ্ছ গাছ আনতেন না কখনও।উনি আনতেন তেজপাতা গাছ কি কারিপাতার গাছ।একবার তো
দারচিনি(দারুচিনি)গাছ আনলেন।আমরা বেশ উত্তেজিত,গাছটা বড় হোলে তার ছাল খাব
কাঁচাই।গাছ বড়ো হোল কিন্তু সেটা দারুচিনি গাছ না হয়ে কাবাবচিনির গাছ হয়ে গেল!এই সেদিনও
আমাদের বাগান এমন বেশকিছু অজানা নামহীন গাছে ভরা ছিল।আর একবার আনলেন ছোট এলাচের
গাছ।বাড়ির পাশেই লাগানো হোল।আদার মতো গাছের ঝাড় হোল।ফুল এলো দোলন চাঁপার মতো।ছোট
এলাচ আর হোল না।তা না হোক জ্যাঠাবাবুর এই অ্যাডভেঞ্চার আমাকে খুব উত্তেজিত করত।
মৌমাছির চাষ,নতুন ধারার ধানের চাষ,ম্যানিওর পিট(সারের
জন্য)বানানো,জল তোলা ডিজেল পাম্প থেকে দেশি ডোঙাকল, ইকমিক কুকার,নতুন ধারার মাছের
চাষ তার সংগে রান্নাঘরে নানান ধারার রান্নার প্রচলন।তার জন্যে মা-কাকিমার
ভোগান্তিও কম ছিল না।বাইরের থেকে যা খেয়ে আসতেন তাই শিখে আসতেন আর তার প্রয়োগ চলত
ভিকিরিপতি গ্রামের সরকার বাড়ির রান্নাঘরে।জ্যাঠাবাবুর উদ্যোগেই আমাদের প্রথম
স্যালাড খাওয়া শেখা। শীতকালে রাতের খাওয়ার শেষে বাড়ির গোরুর দুধে কফি খাওয়া কি
দক্ষিণী খাবার উপমা বাড়ির বউয়েদের ‘রিলিফ’ দেবার জন্যে সারা সন্ধ্যে কুচো চিংড়ি
বেটে তার পকৌড়া বানানো এসব জ্যাঠাবাবুর মস্তিষ্ক প্রসূত।রথের মেলার কথা
বলতে গিয়ে জ্যাঠাবাবুর কথায় চলে আসাটা অনেকেরই ‘ধান ভানতে শিবের গীত’ মনে হতে পারে
কিন্তু আমার জীবনে এসবই ছিল নিত্যদিন নতুনের অভিযান।ঠিক যেভাবে রথ দড়ির টানে তার
নিজের বাড়ি থেকে মাসির বাড়ি যায় আবার কিছুদিন মাসির বাড়িতে থেকে উল্টোরথে নিজের
বাড়ি ফিরে আসে আমার জীবনে জ্যাঠাবাবু ছিলেন তেমনই এক মানুষ।বারে বারে কোথায় চলে
যেতেন আর ফিরে আসতেন নতুন কিছু না কিছু রসদ নিয়ে।বড়ির দেশ মেদিনীপুরে আমরা ভারতের
নানা প্রকারের,নানা রঙের,নানান স্বাদের বড়ি খেয়েছি ভিকিরিপতি গ্রামের বাড়িতে বসেই।বেনারসের
প্যাঁড়া থেকে বেনারসী জর্দা,গুজরাতি আচার থেকে পাঞ্জাবি তড়কার স্বাদ নেওয়া,দিল্লীর
কালাকাঁদ আর লাড্ডু,লক্ষ্ণৌয়ের পান,তার পাশে শক্তিগড়ের ল্যাংচা,বর্ধমানের মিহিদানা
আর সীতাভোগ,কৃষ্ণনগরের শরপুরিয়া আর শরভাজা কী ক্ষীরকদম্ব,সিউড়ির বেলের
মোরব্বা,কলকাতার বড়বাজারের বিখ্যাত পাঁপড় আর ভাঙা বিস্কুট সব জ্যাঠাবাবুর কল্যাণে।
জ্যাঠাবাবুকে আমার কেন জানি না মহাভারতের কর্ণের মতো
‘ট্র্যাজিক হিরো’ মনে হোত।জ্যাঠাবাবুর পাণ্ডিত্য সংস্কৃত-বাংলা-ইংরাজী সাহিত্যে
তাঁর ব্যুৎপত্তি ভিকিরিপতির মানুষদের কাছে সমীহ নয়, সম্ভ্রম নয় সবিশেষ দূরত্ব আদায়
করত।তিনি জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা জানতেন কিন্তু জ্যোতিরিন্দ্রনাথ মৈত্রের
কথা,তার ‘নব জীবনের গান’এর কথা জানতেন কি না জানি না।জ্যাঠাবাবুকে কোন দিন গাইতে
শুনিনি।সলিল চৌধুরীর গণনাট্য কালের গানের গ্রামাফোন ডিস্ক আমাদের বাড়িতে ছিল
কিন্তু সলিলদার ‘আজ তবে এইটুকু থাক,বাকি কথা পরে হবে/ধূসর ধুলির পথ/ভেঙে পড়ে আছে
রথ/বহুদূর দূর যেতে হবে......’গানটা আমার যত প্রিয় জ্যাঠাবাবুর ততটা প্রিয় ছিল কি
না আমি জানতে চাইনি কোন দিন।আসলে জ্যাঠাবাবু ছিলেন আগাগোড়া বঙ্কিম আর রবি ঠাকুরের ভক্ত।কালিদাস
আর ভবভূতির একনিষ্ঠ পাঠক।শেক্সপিয়র আর ম্যাক্সমুলারের অনুগত।
আর তাই জ্যাঠাবাবু চেয়েছিলেন সরকার বাড়ির সংস্কৃতির রথটাকে এই
ভিকিরিপতি ছাড়িয়ে,কেলোমাল থেকে সরিয়ে,তাম্রলিপ্ত বন্দর থেকে যাত্রা করে অনেক অনেক
দূর নিয়ে যেতে কিন্তু বাড়ির বাকি মানুষ জন চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মতো,অনাথ
অপোগণ্ডের মতো ওই রথেই ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে থাকাতে রথটা বেশি দূর যেতে
পারেনি।আলস্যের গেঁয়ো কাদায় পচনধরা চিন্তা চেতনার দড়ি মৌরসীপাট্টার শিক্ষার বাসা
প্রগতির রথটাকে সামনে এগোতে দিল না কিছুতেই।সামুদ্রিক লোনা হাওয়ায় দড়ি ছিঁড়ে,ধ্বজা
উড়ে,চাকা ভেঙে সে পড়ে রইল ওইখানেই।