মন খেরোর খাতা
কাল ছিল রবিবার।ছুটির দিন।যাদের অঢেল পয়সা তারা কাল নিশ্চয় মানিক তলা বাজার থেকে ইলিশ কিনে তার ভাপা কি ভাজা, সরষে ইলিশ কি ইলিশ পাতুরি খেয়েছেন কারণ কাল ভোর থেকেই ছিল দূর্যোগ আর দুর্ভোগ।আগের দিন বিকেলে আকাশের গায়ে ছিল সিঁদুরে মেঘ।চাষা-ভুষা মানুষেরা বুঝতে পারেন সাম্নেই বিপদ।আর শহুরে আর শিক্ষিত তারা বুঝতেও পারেন না।
রাতভোর বৃষ্টি আর থেকে থেকে মেঘের হুমকি।ভোর হতেই আমরা দুজন বেরিয়ে পড়েছিলাম নদির কাছে আর মেয়ের কাছে যাব বোলে।কাক ভেজা হয়ে যখন পৌঁছলাম রানিচকে টোটোর চালক হেসে জিগ্যেস করলে-"মেয়েকে দেখতে?চলুন।উঠে পড়ুন"।অপর্ণা 'লম্বু'র প্যাকেট কিনতে চাইলে চালক বল্লে-'লম্বুর প্যাকেট কিনতে হোলে আরো সকালে আসতে হবে!' আমি শৈশব থেকেই লম্বু খেতে ভালোবাসি।এখন অপর্ণারও প্রিয়।
কথায় কথায় হলদিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির ক্যাম্পাসে পৌঁছে গেলাম।ঝিরঝিরে বৃষ্টি ঝরেই চলেছে।ক্যাম্পাসটা বেশ সাজানো গোছানো লাগল!NAAC এসেছিল কিনা!এবারে নিশ্চয় এরা ভালো পয়েন্ট পাবে।কলেজ এবার ইউনিভারসিটি হয়ে যাবে শুনছি!জানি না ভালো হবে কী না!তবে ওরা বৃষ্টির জল বাঁচানোর প্রকল্পনা নিচ্ছেন।ভারমি কালচার করবেন শুনলাম।শীতকালে নাকি পুরো ক্যাম্পাসটাই মরসুমী ফুলে ভরে যাবে!
মেয়েকে নিয়ে আমরা চললাম টাউনশিপে।এখানে পড়ক্সে আসা ছেলে-মেয়েরা কেউ টাউনশিপে যায় না।তারা যায় 'সিটি সেন্টারে' আর 'বিগ বাজারে'।অথচ এই 'ডক' এই 'ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন' এদের জন্যেই তো বন্দর বেঁচে আছে!হিন্দুস্তান ফারটিলাইজার তো কবেই ডকে উঠেছে!
তিথিপর্ণা হলদি নদি দেখে খুব খুসি।মা মেয়ে এই প্রথম হলদি নদি দেখল ভালো করে।একদিকে হলদি নদি মিশেছে বংগপোসাগরে আর একদিকে গংগা।নদির ওপারটাই নন্দিগ্রাম।আমরা নদির কাছে যাব শুনে বাসের কন্ডাক্টর -"আপনারা কী ওপারে নন্দিগ্রামে যাবেন?"আচ্ছা আমাকে দেখে কী এখনও সাংবাদিক মনে হয়?বিপ্লবী নিশ্চয় নয় ?নন্দিগ্রামের ঘটনার পর নিরন্ন উপবাসে ছিলাম না হয়ত তবে কতো রাত যে ঘুমুতে পারিনি!আর লিখেছিলাম তারপর "ভাতজোছনা"।আমার যা কাজ!
বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ফিরে এলাম কলকাতায়।আমাদের রবিবারটা এভাবেই কাটল।