MON KHEROR KHATA

MON KHEROR KHATA
Memories

রবিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮


উৎসারিত বর্ণমালা

সলিল সরকার










প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ
যোগেন চৌধুরী





যে সেই ছোট্টবেলায়
আলো দিয়েছিল
আমার প্রয়াত মা
আর সেই ছোট্ট থেকে
আমার সব শিল্পকাজে
জড়িয়ে আছে
আমার মেয়ে
তিথিপর্ণা সরকারকে









বর্ণমালার কথা
লেখা, অক্ষর, ভাষা কখন যে কী রূপ ধরে বোঝা মুশকিল! এই হোলো কথা তো পর মুহূর্তেই হয়ত হোলো কথকতা কি নাটপালা কি কবিতা কি ছবি।
এই লেখাগুলিও শুরু হয়েছিল শান্তিনিকেতনে।
যোগেনদা পড়ে বলেছিলেন এগুলোয় না কি শান্তিনিকেতনের পুরানো ঘ্রাণ আছে।আর সেখান থেকেই দাবি রেখেছিলাম কিছু আঁকিবুকি কেটে দেবার।
আমি আপ্লুত কেন না যোগেন দার মতো প্রথিতযশা শিল্পী হাজার কাজের ভীড়েও আমার এই খেয়ালি এলোমেলো অক্ষরকে মান্যতা দিয়েছেন।
এর একটা ইতিহাস আছে।আছে প্রাক কথন। ২০১২ তে কলাভবনে কলাভবনের দেশ বিদেশের ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে একটি মুক্ত নাট্য উপাস্থাপন ঘটিয়েছিলাম রামকিংকর বেইজের তিনটি শিল্পকর্মকে ঘিরে।যার নাম ছিল “ভাতজোছনা”। মানিদার মতো শিল্পী যেমন তার প্রস্তুতি দেখেছেন আবার উপস্থাপনের দিন যোগেনদা হাজার মানুষের মধ্যেই একজন হয়ে দেখেছিলেন
আমার পোস্টমর্টেম পারফর্মেন্স ও এই জাতীয় লেখা শান্তিনিকেতনে অতিথি অধ্যাপক হয়ে এসেই শুরু করে আজও থামিনি।
“উৎসারিত বর্ণমালা” ও “চর্যাশ্রম” কবিতা নয়, নিছক কথা নয়, খানিকটা নাটকাব্য খানিকটা অন্তরঙ্গ নাটপালা। তাই নাম ও কথাও টুকরো টুকরো সময়ের সংলাপ
এই পাণ্ডুলিপিতে কোনও মঞ্চ নির্দেশ রাখিনি সচেতন হয়েই কেন না কে কীভাবে এটা উপস্থাপন মুক্তমঞ্চ কি অন্তরঙ্গে এটি তার তার ভাবনা এবং এই দুটি যে কেউ করতে পারেন অনুমতি সাপেক্ষে।
আগের মন খেরোর খাতা র মতো এবারেও আবীর মুখোপাধ্যায় এইসব অগোছালো খামখেয়ালী নাট্যখেলাকে তার বইওয়ালা থেকে প্রকাশ করতে এগিয়ে এসেছে।
তাকে কী ভাষায় ধন্যবাদ জানাব!

সলিল সরকার
বইমেলা
২০১৮

উৎসারিত বর্ণমালা

এ বছর এ শহর ঢেকেছে বরফে
শেষ চিঠি লিখেছিল জল।
কে যেন বলল ডেকে
কেউ নেই তোর।
আমি জানি চিঠি আছে
আছে তার নীরব অক্ষর।
ব্যস্ত ছিলাম অন্ধকারে
ফুল কুড়োতে।
তারায় তারায় আকাশ ভরা
তবু আঁধার জ্যোৎস্না রাতে
আমি আলোয় ছিলাম
আঁধার হলাম
ফুল কুড়ানোর ব্যস্ত রাতে।
আমি নষ্ট হলাম মধ্যরাতের
জলখেলাতে।
উঠোন জুড়ে প্রদীপ এবং
তেল সলতে
কে এসে যে জ্বালিয়ে দিল
প্রদীপগুলো
ত্র্যস্ত হাতে!
এবার আমি প্রদীপ হলাম
তোমার হাতে মুখ পোড়াতে।
ওটাই ছিল মস্ত ভুল
তুমি এসে   একটু হেসে
নিরুদ্দেশের চিঠির শেষে
ভিজিয়ে দিলে  আনখ চুল।
তুমি যদি চাও মৃত্যুদণ্ড
বিপরীতে থাক চুম্বন।
জিরোবে তোমার ঘরে দু-দণ্ড
বানভাসি লোনা বাদাবন।
ঘাটের কাছে দাঁড়িয়ে আছি অনেক ক্ষণ
শেষ ট্রাম কারশেডে গা ধুতে গেল।
মানছি অতটা ফেমাস হতে পারিনি ফেসবুকে
শেষ চিঠি কবে  কেন  লিখেছি যে কাকে!
এই যাহ্‌! সত্যি কি লিখেছি কিছু?
কেউ কী –‘ যেও না’ বলে
ডাকল আমাকে?
যদি চেঞ্জ করো প্রোফাইল পিক
চ্যাট-এ ভাসাব না ভাইরাস।
ডিলিট করব সবকটা লিংক
বিষে মেশাব না মিস ট্রাস্ট।
অনায়াসে কাল মরে যেতে পারি
যদি আজ দাও চুমো।
শেষ চিঠি সেই দুহাজার বারো
বিবর্ণ ভেজা খামও।
কারা যেন জেগেছিল সারারাত
চিঠি তোর সংগে জাগে  অগ্নি ও জল।
উঠোনে ছড়ানো আজও জোছনার ভাত
এই সেই পৃথিবীর শেষ অকুস্থল!
১০
বহুদিন একা একা কথা বলে যাওয়া
ভাত ও জোছনা শব সাধনায় আছে
শব্দের অহমিকা মুহূর্তের মায়া
বহুদূর হেঁটে যেতে যেতে
যেতে যেতে
যেতে যেতে
যেতে যেতে
হঠাৎ পিছন থেকে
কেউ যদি ডাকে
চেনা কেউ কিংবা কোনও
অশরীরী ছায়া,
কোপাইয়ের দেহলতা এখনও মরেনি
পিপাসা মিটিয়ে নিও
ঈষৎ আলগোছে।
১১
সেভাবে বন্ধুতা হয়না কখনও
তাই অসংকোচে
না কি সৌজন্যবোধে
‘জেনো শুভ জন্মদিন।
ভালো থেকো।
চেয়ো ভালো হতে!’

চিঠির পাঠানো এস এম এস
শেষ রাতে।
১২
বললেই পারতে
কারই বা ভালো লাগে
সারারাত নিদ্রাহীন
খেলা শেষে তোমাকে হারাতে!
#
বললে না কেন?
দূর মহাকাশ থেকে
আকরিক প্রত্যাশা
আলোকিত ভালোবাসা এনো।
#
বলেছিলে না কি
তুমি ঘুমে অচেতন
খেলা করে নিশিভোর
প্রতিবেশী খুকি!
#
বললেই হোতো
প্রতিনিশি খুনসুটি শেষে
রক্তক্ষরণে ক্লান্ত শালবীথি এসে
চুম্বনে প্রণিপাত
বোরোলিন প্রলেপের মতো!
#
ওলো সই, ওলো সই
তোর নাম কি ইচ্ছে করে?
তোর নাম কি প্রতিশ্রুতি
উঠোন জুড়ে
ছড়িয়ে দিলি
বাল্যপ্রেমের স্মৃতির খৈ!
১৩
তোমার দিকে তাকিয়ে আছি
এমন তো নয়
দেখছি তোমাকে।
দেখছি ৃক্ষ, দেখছি নদী
দেখছি মেঘের প্রতিবিম্ব চোখে।
১৪
তোমাকে দেখছি না কি
দেখছি নিজেকে?
সত্যি বল তো কতো
মায়া জমে আছে
কতটুকু অবহেলা পোশাকের মতো
সলিল ও শরীরের শোকে!
১৫
তুমি যখন বলেছিলে
“নষ্ট হইয়ে গেছি”
ওটাই ছিল বেঁচে থাকার ভাষা।
চিঠি যখন লিখেছিল
“অমন করেই বাঁচি”
কী জানি তার কী ছিল প্রত্যাশা!
#
চিঠি যখন ডাকছিল নাম ধরে
অতসী ফুল ফুটল খোয়াই জুড়ে।
#
চিঠি দিল উড়ান
কোপাই হাসে।
চিঠি ও জল
জল ও দিঠি
সমূহ সর্বনাশে!

১৬
যত দুঃখ দিচ্ছ এবং দেবে
কে না জানে
দুঃখ মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে
খুঁড়তে খুঁড়তে
খুঁড়তে খুঁড়তে নিথর প্রেমে
জলের কাছেই যাবে!
#
আরও আঘাত সইব আমি
আরও
আঘাত দিয়ে যদি চিঠি বৃক্ষলতায়
ফুল ফোটাতে পারো।
#
তুমি যতই তীব্র আঘাত দেবে
ক্ষতি যত ক্ষত যত
অমলতাসও পলাশ
হয়ে যাবে।
১৭
যখনই চেয়েছি বলেছ
মিথ্যে করে
আমার এ ঘর
বহু যতন করে
ধুতে দেব
মুছতে দেব তোরে।
#
উড়িয়ে দিলি
পুড়িয়ে দিলি
জলের শরীর জুড়িয়ে দিলি   চিঠি
উজাড় করে।
#
তবু জল শুয়ে আছে সারারাত
নগ্ন তার চিঠি নয়
তারাদের চুম্বনের দাগ।

১৮
কলকাতায় দেখেছি চিঠিকে
আচম্বিতে দেখা হয়ে গেল!
হাতে টানা ট্রলিব্যাগ
ট্যাগগুলো কোন কোন দেশের
দূর থেকে শুধু সাদা কালো
সংগে কোনও বন্ধু নেই
আধকামড় আপেলের জ্যান্ত শব।
রাঙ্গা নখে খামচে ধরা
হেসে বলল- ডেস্টিনি রৌরব।
তৎক্ষণাৎ স্মার্ট ফোন ঘেঁটে
অভিধান দেখি
রৌরব বাংলায় বিশুদ্ধ নরক!
১৯
আজ কোনও চিঠি আসেনি।
আজ চিঠি ঘুমিয়ে পড়েছে।
ওগো দুখজাগানিয়া কবি
গান নয় লেখো ইস্তাহার।
বিপ্লব এখনও জাগেনি।
২০
আমি বললাম হ্লুদ পলাশ
চিঠি বলল লাল।
জলের শরীর তিরতিরিয়ে কাঁপে
চিঠির শরীর হয়েছে উত্তাল।
২১
আজকে চিঠি রাগ করেছে
খুউব।
জলের শরীর চিঠির চোখে
খোয়াই নিশ্চুপ।
২২
এবার যদি ডাকো বলব
পরে
চিঠি তখন খুব কাঁদবে
কোপাই নদীর চরে।
২৩
গোয়ালপাড়ার মহুল বনে
দিতে চাইলে চুমো।
বলব- চিঠি ভুবন ডাঙায়
সন্ধ্যা হয়ে নেমো।
২৪
চিঠি এখন অভিমানে
চিঠি এখন দূরে।
চিঠি এখন রঙিন খামে
শিমুল তুলো ওড়ে।
২৫
আজ চিঠি এসেছিল কাছে
বাতাসে এখনও তার
গন্ধ লেগে আছে।
২৬
আজ চিঠি এলো
আলগোছে।
আমার হেমন্ত দিন
তোমার বসন্ত এনেছে।
২৭
আজ চিঠি এসেছিল ঘরে
গোধুলির ত্র্যসরেণু এখনও
রোদ্দুরে।
২৮
আজ চিঠি এঘরেই আছে
জল তাই সারারাত
জেগে আছে
রাতপাখি
চাঁদ এবং নক্ষত্র
তারাদের কাছে।
২৯
আজ চিঠি ঘুমায়ে পড়েছে।
প্রহরীর মত তাই চাঁদ আর শিশিরের
জল জেগে আছে।
৩০
চাঁদ চিঠি
চিঠি ছাঁদ
জলচিঠি
চাঁদ চিঠি জল।
সোনাঝুরি
হাট নয়
প্রেমিকের মুক্তাঞ্চল।
৩১
আজ চিঠি আম্রকাননে
আজ চিঠি সংগীত ভবনে
আজ চিঠি পাঠ ভবনে
আজ চিঠি
পুঞ্জে পুঞ্জে
নিঃস্বর গুঞ্জরনে।
৩২
আজ চিঠি কালোর দোকানে
আজ চিঠি আবীরের স্নান।
আজ চিঠি বইওয়ালা ক্যাফে
আজ চিঠি সারাদিন
সারারাত
বসন্তের রবীন্দ্রগান।
৩৩
আজ চিঠি প্রেম লুকোচুরি
আজ চিঠি খোয়াইয়ের লাল
আজ চিঠি কোপাই অজয়
জল মাটি রোদ বনাঞ্চল।
৩৪
আজ চিঠি প্রভাতফেরিতে
আজ চিঠি মিছিলের প্রথম সারিতে।
আজ চিঠি ঘুমে জাগরণে
আজ চিঠি ধুলো খেলা সোনাঝুরি বনে।
৩৫
আজ চিঠি সেবা পল্লীতে
আজ চিঠি বন ঝিল্লিতে
আজ চিঠি কলাভবনে
আজ চিঠি নেশা পবনে।
৩৬
আজ চিঠি বাউল দোতারা
আজ চিঠি ফকিরের খ্যাপা একতারা
আজ চিঠি মানিদার দেওয়াল বাহারি
আজ চিঠি আঁকিবুঁকি যোগেন চৌধুরী।
৩৭
আজ চিঠি মন্দিরা তালে
আজ চিঠি ভালোবেসে
প্রাণভরে আবীর মাখালে!
আজ চিঠি গানে গানে নাচে।
আজ চিঠি এখানে
এইখানে
এখানেই আছে।
৩৮
ওই তো চিঠি বনলতা রোদ্দুরে
ওই তো চিঠি রঙ মাখা বোলপুরে
#
ওই তো চিঠি আঁচল উড়ায়ে যায়
ওই তো চিঠি এই বসন্তে
প্রথম যুবতী হয়।
#
ওই তো চিঠি খেলছে মেলার মাঠে
ওই তো চিঠি খুনসুটি দিঠি আলগোছে
নখ কাটে।
#
ওই তো চিঠি আম্রকুঞ্জে হাঁটছে গোধুলিবেলায়
ওই তো চিঠি হাতে হাত ধরে দেখছে “মায়ার খেলা”


#
ওই তো চিঠি চেঁচিয়ে বলল “ছুটি”
ওই তো চিঠি একা বসে ভাবে
আজও কেন চাঁদ পোড়া ঝলসানো রুটি?
৩৯
আজ এই বিষন্নবেলা
আজ হোলো শেষ মায়াখেলা।
#
আজ চিঠি চৈতালি ছায়া
আজ চিঠি বিকেলের মায়া।
#
আজ জল ঝরাপাতা ফুল
আজ জল শেষ বড়ো ভুল।
#
আজ চিঠি লাস্ট ট্রেনে শহরে ফিরেছে।
আজ জল এইখানে
ধুলোখেলা স্মৃতি নিয়ে আছে।
৪০
এবার শান্ত হও
যত অবহেলা অপমান
সব তো কুড়িয়ে নিয়েছ
মাটি থেকে।আর কী চাও?
টুকরো টাকরা পড়ে যদি থাকে
তুলে এনে দেবে ঠিক
খুঁজে খুঁজে
তোমাকেই।
শেষ কবে লিখেছিলে কিছু
ভুলে যাও।
লেফাফায় অবহেলা না কি অভিমান
সেও তো ভুলেছ
কবে!মুছে নাও
চোখ নয়,চোখের প ল কে
যা কিছু কুড়ানো স্মৃতি
বুকের দেরাজে
অগ্নি হোক
বায়ু হোক
জল নয়
পুড়ে হোক
ভস্মীভূত ছাই
একদিন সভ্যতা
খুঁজে পাবে
ফিনিক্স পাখিরাই।
(অন্ত)

























চর্যাশ্রম
আমি তোমাকে দেখেছি
হ্যাঁ, তোমাকেই
মেঘ ধোঁয়া চাঁদ কুয়াশায়
তুমি নীলপরী হয়ে হেঁটে চলেছিলে
স্বপ্নের আলপথে।
এই তুমি কে?
তুমি কে তুমি কে
তুমি কে?
#
আমি দেখেছি তোমাকে
বিবর্ণ ট্রাম,
অটো হয়রান
ধুলো ওড়া ফুটপাতে।
#
তুমি বাঁচার দাবিতে
মিছিল সারিতে
প্রতিবাদী ফেস্টুনে।
ময়দানে  তুমি কে?
#
আমি সেদিন বুঝিনি তোমাকে
আধোঘুম ভেজা চোখে।
তুমি জানালার গ্রীলে
চাঁদ উঁকি দিলে
যেতে যদি মুখ ঢেকে
আমি জানতে চেয়েছি
কে?
#
আমি জানতাম তুমি সেই
তুমি একলা কালো মেঘমালিকা
বৃষ্টির অভ্যাসে
তুমি টুপটাপ ঝরা চুপচাপ
ভেজা জুঁই।
#
তুমি বৃষ্টি
তুমি বৃষ্টি
তুমি বৃষ্টি হলে যেই
লোডশেডিংয়ের সন্ধ্যাকালে
আলগোছে
মেঘ ছুঁই।
#
তুমি বৃষ্টি
তুমি বৃষ্টি
তুমি বৃষ্টি হলে যেই
আমার উঠোন জুড়ে
কিশোরী আকাশ
অবেলায় ভিজবে
ভিজবেই।
#
তুমি দেওয়ালের ফ্রেমে
বব ডিলানের গীটার
তুমি মুখে মুখে ফেরা
জোয়ান বেজের গান
তুমি ভোরের শিশিরে
ছাতিমতলায় কবি
তুমি চাঁদের শরীরে
পিছুটান হয়ে
মাইকেল জ্যাক স ন।
#
আজ এইটুকু থাক
হৃদ যমুনার কূলে
বাকি কথা ভাসে গাঙ্গুরে
বেহুলা ভেলায়
তুমি খুনসুটি শেষে
সমে ফিরে এসে
হারাবে গানের খেলায়
আমি জানব না
সুরে মানব না
ফিরে জানব না
তুমি কে
তুমি কে

তুমি সেই।
বৃষ্টি এলো
বৃষ্টি এলো যেই
হঠাৎ দেখি লগ্নভ্রষ্টা
জুঁই
আর একলা কালো
মেঘমালিকা
বৃষ্টিভেজা তুই!
#
বৃষ্টি মানেই
স্মৃতির ঝাঁপি খুলে
উঠোন জুড়ে জল থৈ থৈ
ভেজা চিঠির গন্ধ।
#
বৃষ্টি হলেই পায়ের পাতায়
জল
লোডশেডিংয়ের সন্ধ্যাবেলা
অন্য কথার ছল।
#
চিঠি এখন অন্যখামে
বুকের ভিতর ধুলোর পাহাড়
জমল।আমি তখন ছিলেম
মগন গহন   ঘুমের ঘোরে
যখন বৃষ্টি নামল।
ধর তোর মেঘলা মনে উড়তে ইচ্ছে
ধর তোর হাতের পাশে চারটে পাখা।
ধর তোর সঙ্গে নারীর শরীর ভিজছে
ধর তোর এমন দিনে আকাশ দেখা।
ধর তুই স্তাবক পেলি ইচ্ছে ডানায়
ধর তুই চলতি হাওয়ায় হে চিরসখা।
তখনই খপ্ করে তুই পাখির ঠোঁটে
ধুত্তোর তুই কি পাখি?

বাদলা পোকা।
এ শ্রাবণে জেগে আছো যদি
জেনো তুমি নদীর মতোই অস্থির।
এ শ্রাবণে বুঝে জেনে শীতঘুমে গেছ
জেনো তুমি চিরস্থায়ী বৃদ্ধ স্থবির।

ধরো তুমি কোপাই পাড়ে মেঘ জমেছে
ধরো তোমার পায়ের চিহ্ন মুছল প্লাবন।
তবু তুমি চাইছ সাহচর্য মিছেই
শোকে নয় সুখেই কাটে বাইশে শ্রাবণ।
বৃষ্টি এলে ভিজতে থাকে গাছের পাতা
বৃষ্টি হলে রবীন্দ্রনাথ গানের খাতা।
বৃষ্টি এলে খাবার খোঁজে বৃদ্ধ বায়স
বৃষ্টি হলে ভিজছে দূরাগত বয়স।
বৃষ্টি এলে বাংলা ভাসে সংবিধানে
বৃষ্টি হলে বিধানসভা ছিঁচকাঁদুনে।
বৃষ্টি এলে জল ছাড়াতে ভাসবে ক‍্যানেল
বৃষ্টি হলে ব‍্যস্ত ভীষণ টিভির চ‍্যানেল।
বৃষ্টি এলেই নোংরা জলে বস্তি ভাসে
বৃষ্টি হলে মন চলে যায় বিয়াল্লিশে।
বৃষ্টি কি বাইশে শ্রাবণ বৃক্ষরোপণ
বৃষ্টি কি ছাপ ফেলেছে জীবনযাপন?
বৃষ্টি কি আজ নিছক স্মৃতিমেদুরতা
বৃষ্টিভেজা তবুও প্রিয় এ কলকাতা।
বাড়তে 
বাড়তে
বাড়তে
বাড়তে
তুমি এতোদূর পৌঁছেছ যে
মেঘের শরীর ছুঁয়ে
বলো আমার পাপ নয়
পা ধুইয়ে দাও।
যেতে
যেতে
যেতে
যেতে শেষে
খাদের কিনারে এসে
হাতের মুঠোয় ধরা মৃত‍্যুকে
উড়িয়ে দিয়ে বললে
মুঠোয় ছিলি তাই
বাজিটা জিতলাম।
শিরশির করছে শরীর।
সেকি শীতের হাওয়ায়
না কি শীৎকারে!
ঘিনঘিন্ করছে গা
সেকি বেয়াদব মেধায়
না কী অপারগ চীৎকারে?
সব শস‍্য ওষধি এখন
সবখানে নিকানো উঠোন
সব ঘরে দেশলাই আছে
এসো সুবাতাস এসো
জেগে উঠতে লাগে কতক্ষণ?

বেঁচে থাকাটা যতটা দুরূহ
মেরে ফেলাটা তার চেয়েও কঠিন।
১০
যখন দিগন্তে সিঁদুরে মেঘ
নিজের একান্তে কাঁপি ভয়ে।
যখন হৃদয়ে উদ্বেগ
তখন এসেছি ঝড় হয়ে।
১১
আগুনে ভাসছে আমার শহর
আগুনে পুড়ছে ঘর
আলোয় জ্বলছে আমার শহর
ঈশ্বরী-ঈশ্বর।
১২
আমার পুড়ে যাচ্ছে শরীর
তোমার হাওয়ায় উড়ছে চুল
আমার সঙ্গসুখের নীড়
ছিল সংসারে মশগুল।
আমার বাউণ্ডুলে চলন
তোমার গোছানো সংসার
আমার বুকের ভেতর লালন
তোমার নিত‍্য আশঙ্কার।
১৩
আমার পুড়ে যাচ্ছে ঘর
আমার উড়ে যাচ্ছে পাখি
তোমার শরীর জুড়ে জ্বর
জানি অনেকটা পথ বাকি।
আমার বেহিসেবি কথায়
তোমার অঙ্গ জুড়ে নদী
আমি জাহান্নমে যাব
তুমি সঙ্গে থাকো যদি।
১৪
আজ সকালে একটা কিছু ঘটবে
দুপুর বেলা মাঝ আকাশে বৃষ্টি নয়তো রোদ
হলুদশাড়ি বিকেলের কোন্ দৃশ‍্যে
সন্ধেবেলায় তোমার আশ মিটবে?
১৪
কে কাঁপল?ভূমি?
আমি ভাবলাম স্বেচ্ছাচারী
তুমি।
১৫
Top of Form
সেদিন যখন দাঁড়িয়ে ছিলি পুকুর পাড়ে
ছোট্ট মেয়ে ঘাটের কাছে ভরা বরষায়
টুপ করে ডুব দিচ্ছিল রোদ চুপিসাড়ে
ও মেয়ে তুই নাইতে এলি কার ভরসায়?
এই তো সেদিন শুনেছি গান ছোঁয়াও প্রাণে
আগুনের পরশমনি আকাশ জুড়ে
সে কণ্ঠ লেগে আছে আজও কানে
কে তোকে হঠাৎ ডাকে কোন গহনে?
আমিও নাইতে যাব গানের ঘাটে
সুজাতা সুরের দোহাই থামাস না গান
মৃত‍্যুকে তুই কিনেছিস সুরের হাটে
ভরা থাক স্মৃতিসুধায় সেইটুকু মান।
১৬
মাটির গভীরে একটু কাদা একটু জল
অনেক লাভা বরফ হয়ে জমে আছে।
আমার শরীর মৃত ও তাই অচঞ্চল
আমার মতোই সবাই কৃমিকীট হয়েছে।
আমরা সবাই নির্বিবাদী নপুংসক
নপুংসকের যৌনক্ষুধা সংগোপন
হাজার বছর এমনভাবেই হে রক্ষক
জীবন্মৃত বাঁচার নামই সুসঙ্গম।
আমি তো নয় তোমার মতো বীরাঙ্গনা
আমি তো নয় সময় কালের বিদ্রোহিণী
ধর্ষিত লাশ ভ্রষ্ট সময় আন্তিগোনে
মাটি তোদের ডাক দিয়েছে
হে নন্দিনী।
১৭
খেলার তুচ্ছে
বাড়তে বাড়তে কোথায় পৌঁছলে
পায়ের নিচে মৃত্তিকা না বালি?
চলতে চলতে কী কথা কইছিলে
কোন্ আঁগে কার পোড়াবে গেরস্থালি?
পুড়তে পুড়তে পুড়ে যাচ্ছে সব
খুঁড়তে খুঁড়তে উঠে আসছে না জল।
শব পুড়ছে তোমার মহোৎসব
সর্ব নাশই তোমার সম্বল।
তুমি ভাবছ এভাবেই দিন যাবে
তুমি ভাবছ তাৎক্ষণিকই সব
অখিল ক্ষুধায় শেষে যে নিজেকে খাবে
খেলার তুচ্ছে গরলই বৈভব।
খেলার শেষেও অনেক খেলা চলে
বেলা শেষেই আগুন জ্বলে মাঠে।
তুমি ভাবছ ওসবই আলেয়া
আলেয়া নয় হৃদয় জেগে ওঠে।
কোথায় যাচ্ছো কী করছ অঞ্জন?
রঞ্জনেরা আজো মরেনি।
সময় জাগায় আমারই প্রাঙ্গণ
আমার পাশেই নিশান ওড়ায় ঈশাণী নন্দিনী।
১৮
ওই তো একা দাঁড়িয়ে আছে শূন্য ক্ষেতে
সাতটি দোর রক্ষীছাড়া আগল ভাঙা।
শহীদ লাশে উড়ছে মাছি অপেক্ষাতে
শেয়াল শকুন এবং কামুক বৃহন্নলা।
এবং কিছু স্তাবক কিছু বন্দুকবাজ
এবং কিছু ভাবুক কিছু গায়ককুল
এবং রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক লুঠতরাজ
এবং কিছু যৌনকর্মী ছড়ায় ফুল।
তপ্ত রোদ শুকায় মাটি শস‍্যক্ষেতের
চোখের জল ভয়ার্ত মুখ লুকিয়ে রাখে
অতৃপ্ত কাম স্বস্তি খোঁজে মধ‍্যরাতের
তারারা হিম চাদর দিয়ে লজ্জা ঢাকে।
এমৎকালে কে তুই মেয়ে সারাৎসারে
বুক চিতিয়ে উঠে দাঁড়াস বীরাঙ্গনা
এই তো সেই বিদ্রোহিনী আন্তিগোনে
তুই আমাদের ঈশাণী পাড়ার নন্দিনী না?
১৯
তুমি ভাবছ দিব‍্যি আছো বেঁচে
তুমি ভাবছ এই তো আছি বেশ।
তুমি সেঁকছ হাত ধর্ম আঁচে
সেঁকতে গিয়ে পণ‍্য তুমি,বিপন্ন স্বদেশ।
২০
সে বসেছিল মোম আলো জ্বেলে
একা বিষাদের কালি ঘর জুড়ে।
আজ খোলা মাঠে জলছুরি খেলে
পাশে নেই কেউ পাপ একা পোড়ে।
২১
কারা যেন মৃত‍্যু নিয়ে সওদা করে
কারা রোজ ক্ষমতার আস্ফালনে রতিসুখ চায়।
কারা যেন হাসতে হাসতে বেড়ে দিতে পারে
বাড়া ভাতে পরমাণুবোমা ও ছাই।
বেয়াদবি মাফ করবেন বাঁচার দোহাই
আসুন শান্তিপূর্ণভাবে প্রকাশ‍্য রাস্তায় নেমে
একে একে তাহাদের উদোম ক‍্যালাই।
কারা যেন বিষাদের কালি মেখে
ভাটের কবিতা লেখে
নিরাপদ পাপের আশ্রয়ে।
কারা যেন সতীসাধ্বী সেজে
রোজ রাতে দাঁত মেজে
সন্তানের রক্ত চুঁষে খায়।
বেয়াদবি মাফ করবেন বাঁচার দোহাই
আসুন শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে
রাস্তায় টেনে এনে
একে একে তাহাদের উদোম ক‍্যালাই।
এও যদি খুব বেশি
চাওয়া মনে হয়
বেয়াদবি মাফ করবেন বাঁচার দোহাই
আসুন শান্তিপূর্ণভাবে 
শকুনকে পায়রা ভেবে
অশান্তির আকাশে ওড়াই।
২২
কী অপূর্ব চিরাচরিত সে
কী অপূর্ব চির অবুঝ মন।
কী অপরূপ দ্বিচারি অভ‍্যাসে
পুড়ে যাচ্ছে
ভিটে মাটি
শস‍্যকণা
দোর দালান
সুখ শান্তি
নিকানো উঠোন।
২৩
নত হতে হতে
হতে হতে
হতে হতেই
হতে পারো
চির অনুগত।
ঘরে যেতে যেতে
যেতে যেতে
যেতে যেতেই
ছুঁয়ে দেখো চিরস্থায়ী
সুগভীর ক্ষত।
২৪
ঝাপসা দেখছি মানেই বুঝি সামনে কাচ
ভ‍্যাপসা গরম দমচাপা কার দীর্ঘশ্বাস?
আলগা ঠোঁট বল্গাহীন তার ছোঁয়াচ?
বৃষ্টি নামছে ঝাপটা দিচ্ছে সর্বনাশ।
২৫
যতোই বৃষ্টি থামুক না
এবং অশান্তি নামুক না
শাপলা মানেই শালুক না
খ‍্যাপলা ফেলা তালুক না
ঘাপলা করে ঘামুক না
কাঙাল কিন্তু কামুক না
হয়ত সবাই বিমুখ না
অসুখ-বিসুখ সমুখ না
কীর্তি হর্ষ পূর্তি না
অধঃপতন ফুর্তি না
বিষম তোড়ে ভাঙুক না
উঠোন দালান ভাসুক না
খেলা আরও জমুক না
উৎসাহী সব দমুক না
পিছু টানছে যারা টানুক না
হঠাৎ দড়ি ছিঁড়ুক না
বাঁধন ছেঁড়া সাধন যার
তার তো রোদন মানায় না
বলছি কিছুই বলছি না
অসম্ভবে ভুলছি না
সেই কথাটা তুলছি না
দোদুল্যমান দুলছি না
আমি নস্ত্রাদামুস না।
২৬
অনেকটা জল
একটু তেল
দীঘির জলে রঙের খেল্।
*
তেলের গায়ে
হরেক রং
নীলসাদালাল সবুজ ঢং।
বেগনীহলুদ জাফরানি
মুই রাজা তুই পাটরানী।
*
বাটপাড়িতেও সিদ্ধহাত
সৎ লোকই বদ
যাক্ নিপাত।
*
কিন্তু পাশা উল্টোলে
ছুটবে কী আর
ঠ‍্যাং তুলে?
পুট পড়ে ফুট সাপলুডো
ন‍্যাজ নাড়িবে 
নির্বোধও।
*
রাজা কানেই দেখতে পান
সংগে ঈষৎ 
স্তবের গান।
ক‍্যাওড়া কবি লাগিয়ে তান
তেওড়া তালে
গান শোনান।
*
এবং
ডেঁয়োপিঁপড়েরা
বোলতামাছিভোমরারা
গুড়ের ভাঁড়ে লাগিয়ে মুখ
আহুম্মকের আত্মসুখ।
*
বাস্তুঘুঘুর আস্তাকুড়ে
নাচবে খেঁদি
ঘুরে ফিরে।
*
সেদিন রবির 
শেষ বিদায়
সময়টা খুব
সুখের নয়।
২৭
এমন তো হামেশাই হয়
বাসা বাঁধে পরিযায়ী পাখি
তস্কর কাক ও ঈশ্বরী।
#
এমন তো হামেশাই হয়
খাটাখাটনি কুক্কুট কুক্কুটির
ডিম খায় রসমঞ্জরী।
#
এমন দিনেই তারে বলা যায়
কী ঘর বানাও বৃথা শূন‍্যের মাঝার।
#
ঘর থেকে অতিথিকে ঠেলেছ দু পায়
তোমার ওই হিম চোখ দেখে
সে ভেবেছে দিনান্তে ডাকছ তাকে
এখনই যাস্ নে ফিরে আয়।
২৮
তোমার কাছে চেয়েছিলাম একটা ঘর।
মস্ত বড়ো জানলা থাকবে, আলো আসবে
ধুলো আসবে।হলুদ পাতা আঁক কষবে
কীটপতঙ্গ জুড়ে বসবে,পাখির পালক উড়ে আসবে শেষ প্রহর।
খুব একটা কিছু চেয়েছি কী?
ভর্ৎসনাতে ভিজতে থাকি
শরীর জুড়ে নখের আঁচড়
লিখছ বুকে বড্ড বেশি
"
স্বার্থপর"
২৯
ধরো মেঘ করেছে, তুমি বাড়ি ফিরছ
হাওয়া বইছে জোরে,উড়ছে গানের খাতা।
তুমি সামলাবে কি যা কুড়িয়ে পাচ্ছো
তোমার অবিন‍্যস্ত মনের বিষন্নতা।
৩০
ধরো ফেরার আগেই তুমুল বৃষ্টি এলো
তোমার ওই গানের খাতা আঁচলে সিক্ত ঠোঁটে।
স্বরলিপি ভাগ‍্যি ছাপা, হোক না এলোমেলো
ভিজে চুল একবারও কি বাদলে তান সপাটে!
৩১
হাওয়ারা বিপর্যস্ত গাছেরা বিবস্ত্র প্রায়
ঝরাপাতা নৌকা হয়ে মোহনায় পৌঁছবে কি?
বেহায়া গানের খাতায়
অবসর খুঁজতে থাকি।
৩২
কোন্ কথা হয়নি বলা
একতারার একটি তারে।
বেয়াদব ইচ্ছে ডানায়
তখনও বৃষ্টি পড়ে
৩৩
কবি যদি শয়তান হয়
শয়তানও কবি হতে পারে।
সব কবি সত‍্যদ্রষ্টা নয়
কারও কারও চোখে ছানি পড়ে।
৩৪
ধরো তুমি লিখলে "হৃদয়"
তাতেই বা কী প্রমাণ আসে?
সবুজ বাঁশেরও ফুল হয়
লাল ঘাসে নীল ঘোড়া হাসে।
৩৫
বাৎসায়নের লেখা পড়ে
কেউ যদি মৎস ধরিতে ছোটে।
চ‍্যাং মাছ খাপুর খুপুর
বিদুষক ধর্মশাস্ত্র ঘাঁটে।
৩৬
যে সয় সেই নাকি রয়
প্রাচীন প্রবাদ তাই বলে।
যার কিছু হারাবার নয়
সেই তো পেয়েছে আসলে।
৩৭
ধরো,ধরা যাক্ পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছো
খুব স্বাভাবিক কিছু ফেউ পিছু নিচ্ছে।
পথ ক্লান্তিতে হয়তো পথেই জিরোচ্ছো
কিছু সারমেয় উচ্ছিষ্টে ল‍্যাজ নাড়ছে।
কিছু মাটি থাকে বন্ধ‍্যা,নাবাল, আগাছা
ভরা শরীরে স্তোকনম্রার বাখানও।
কিছু মৌমাছি হুল ফোটাবার অছিলা
খোঁজে রুটি খুঁটে রোজগার জীবনও।
এইভাবে দিনগত পাপ অপচয়
এভাবেই কূপমণ্ডুক নীর স্থবিরে
পারস্পরিক মন্থনে কীট রত হয়
পারস্পরিক বোঝাপড়া চলে গভীরে।
তবু অবিচল তুমি স্বপথে হাঁটছো।
সে সারমেয় অবিরাম পিছু হটছে

৩৮ 
এমন আষাঢ় আগেও এসেছে কতো
বিরহী যক্ষ্ম কী জানি কোথায় গোপনে,
মেঘেরাও ছিল অকাল তড়িতাহত
স্বপ্নের ছিল ব‍্যস্ততা বীজ বপনের।
*
আলটুসি চিঠি ভিজত দুপুর বেলা
আদুড় আষাঢ় আলগোছে ফ্রক তুলে।
দোতারার তার আঙুলেই কথামালা
বৃষ্টি দুপায়ে হেঁটে ছিল পথ ভুলের।
*
চিঠি তোর কাছে আজ কিছু না পাবার
ধুলো খেলা যায় দুবেলা হেঁসেল ঠেলে।
স্মৃতির দেরাজে তুলে রাখা দোতারার
সব দিনলিপি সদালাপী মল্ হারে।
*
তবুও আষাঢ় ভরা প্লাবনের ছলে
কী গান গাইছে হাতে নিয়ে উকুলেলে?
৩৯
হৃদয় হৃষ্ট পুষ্ট
অনাগত উচ্ছিষ্ট।
#
প্রেম রস ভরা কবিতা
বাওয়া ডিমে বৃথা দেওয়া তা।
#
ছায়ানটে অনুরাগ নয়
দীপকে আগুন আলো হয়।
#
বেলা গ‍্যালো জ্বাল বাস্ না
শেষ কথাটাই শেষ না।
৪০
দানপত্র লিখে রেখেছি
জানি চলে যেতে হবে
তার চিঠি সেদিন পেয়েছি
জানতে চেয়েছে যাব কবে?
যেতে পারি এবং যাবোও
এর নাম বেঁচে থাকা নয়
নৌকার ছৈ খুলে নেব
গুন টানব ভাটার সময়।
গনগনে রোদে পিঠ পুড়ছে
মেঘ ডাকছে আয় আয় আয়
নৌকাটা পা দিয়ে ঠেলে মুখে বলছে
এখন কি না গেলেই নয়?
কারা শত্রু বন্ধুই বা কে
কারা পড়শি, কেই বা স্বজন
খেরোর খাতায় লিখে রেখে
মলাটে লিখেছি অভাজন।
পাখি পুড়ছে পাতা পুড়ছে জানি
দেশ পুড়ছে নানান ইন্ধনে
কে না জানে ধর্মের আগুনই
ওঁৎ পাতে হাওয়ার সন্ধানে।
এসব কারণে চলে গেলে
তুমি বলবে ভীরু পলাতক
যাব দেশ বাসযোগ্য হলে
মৃত‍দেহ রেখো মুক্তাঞ্চলে
শোক হোক সুগভীর শ্লোক।
(অন্ত)