MON KHEROR KHATA

MON KHEROR KHATA
Memories

মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০১৭

বাদল বাউলের একতারা
সলিল সরকার
 
চেনা পরিচয় বহুদিনের এমন দাবি করি না।আবার খুব বেশি নয় তাও বা বলি কী করে?ভিকিরিপতি গ্রামে বসেই রেডিয়োতে তার নাটক শুনতাম।শম্ভুদার সেই জাদুকরী কণ্ঠে “দম্পতি>জম্পতি>জায়াপতি”,”অমল বিমল কমল এবং ইন্দ্রজিৎ”।
অজিতেশদার ভরাট গলায় “বল্লভপুরের রূপকথা”।তখন থেকেই জানি বাদল সরকার বাঙালি হয়েও জাতীয় নাট্যকার।রবীন্দ্রনাথের পরে বাদলবাবুর নাটক সবচেয়ে বেশি নানান ভারতীয় ভাষায় অনুদিত হয়েছে।আর এমনও হয়েছে কোনও কোনও প্রদেশ ভেবেছে বাদল সরকার তাদের ভাষারই নাট্যকার।এ নিয়ে ঘটে যাওয়া এক মজার কথা না লিখে পারছি না।
হিন্দি নাটকের প্রতিভাময়ী নাট্যব্যক্তি এই কলকাতার প্রতিভা অগ্রবাল যিনি প্রখ্যাত নাট্যকার ভারতেন্দু হরিশ্চন্দ্রের আত্মীয়া নিয়মিত বাংলা নাটকের হিন্দি অনুবাদ আর হিন্দি নাটকের বাংলা অনুবাদ করতেন।একবার অখিল ভারতীয় কার্যক্রমের জন্য তাকে দিল্লি থেকে একটি নাটক পাঠানো হোল যার বাংলা তর্জমা করে দিতে হবে।প্রতিভাজি প্যাকেট খুলে দেখলেন নাটকটির নাম ও নাট্যকারের নাম।এবার কলেজ স্ট্রিটে গিয়ে নাট্যকারের মৌলিক নাটকটি কিনে দিল্লির আকাশবাণীতে পাঠিয়ে দিলেন।নাটকটির নাম “পাগলা ঘোড়া”।নাট্যকারের নাম যে বাদল সরকার সে কথা কী বলে দিতে হবে?
বস্তুত ভারতীয় নাটকের এই কিংবদন্তী বাঙালি নাট্যকার প্রথম জীবনে প্রসেনিয়ম থিয়েটারের সার্থক নাট্যকার।
বাদল সরকারের জন্ম ১৯২৫এর ১৫ জুলাই।উত্তর কলকাতার হেদুয়ার কাছে মানিকতলার প্যারি রোতেই সারাজীবন কাটিয়ে গেলেন। শিবপুর  থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করে প্রথমে মাইথনে পরে কলকাতায় চাকরি করেন।মাইথনের চাকরি আর শখের নাট্যচর্চা তাকে নাটক লিখতে প্রেরণা জুগিয়েছিল।
 ১৯৫৭-৫৯ লন্ডনে এরপর ১৯৬৩-৬৪ সালে ফ্রান্সে থাকার সময় প্রচুর ইউরোপীয় থিয়েটার দেখার সুযোগ পান।কর্মসূত্রে নাইজেরিয়ায় থাকার সময় বেশ কয়েকটি নাটক লিখলেন। ১৯৬৭ সাল থেকে টাউন প্ল্যানিং এর চাকরী নিয়ে কলকাতায় স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করেন। নাটক লেখা, প্রযোজনার কাজ ছাড়াও দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ানোতে অদম্য উৎসাহ ছিল। বিশ্বভাষাএস্পারেন্তোনিয়ে ছিল তাঁর বিশেষ আগ্রহ, নিয়ে কয়েকটি বইও লিখেছেন তিনি। শেষ কয়েক বছরে আত্মজীবনীমূলক লেখাপুরানো কাসুন্দীতে বিস্তারিতভাবে নাটক দেখা, করা, নাটক নিয়ে নানা ভাবনা চিন্তার কথা সরস ভাবে লিখে গেছেন।আর একটা কাজ তিনি শেষবেলায় শুরু করেছিলেন “কোলাজ”।
বাদল সরকারের প্রথম পর্বের নাটক মূলত সরস কৌতুক। মাইথন অফিসারদের রিক্রিয়েশন ক্লাবে নিয়মিত নাটক হতো। বড় পিসিমা, সলিউশন এক্স, রাম শ্যাম যদু, বল্লভপুরের রূপকথা,  

বাংলা নাটকে সরস কৌতুকের এক নতুন মাত্রা আনল। এর আগে কমেডির নামে যা লেখা হচ্ছিল তা যেন শিথিল ভাঁড়ামো। এমন ঝরঝরে ভাষায় তরতর করে এগিয়ে যাওয়া ব্যাপারটা ছিল না বললেই চলে। এরপর লিখলেন “সারারাত্তির”। এই সবকটি নাটকই সেসময় বিপুল সাড়া ফেলেছিল। বাংলা নাটকে তখনো নতুন চমক আসার কথা ভাবেননি কেউই। রক্তকরবী-এর পরে যেমন নবান্ন সেইভাবেই এলো “এবং ইন্দ্রজিৎ”। বাংলা নাটক আধুনিক হয়ে উঠল।