MON KHEROR KHATA

MON KHEROR KHATA
Memories

মঙ্গলবার, ২ আগস্ট, ২০১৬

এ কোন আবেশ......?
সলিল সরকার
আমাদের শৈশব অতি প্রাচীন এবং ফসিলসম প্রস্তরীভূত নিরুত্তাপ,নিস্তেজ,নিরা্সক্ত ন্যাকামো আজকের নিরিখে।আর আমাদের মনে হোতো এমন নিষ্পাপ নিরুপায় অনিশ্চয়তায় কী নিদারুণ নিষ্কলঙ্ক নিরুপদ্রব নিখিল নিরালা।
আমাদের উত্তেজনা ছিল নতুন সিলেবাসের পুরানো বইয়ের পেন্সিলের দাগ আর হাতে হাতে ফেরা বাসি গন্ধে। আমাদের কৌতুক ছিল সমবয়সী কারও বোতামখোলা পোস্ট অফিসে।আমাদের পাপ ছিল উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে আপন আপন অঙ্গ নিয়ে ডাংগুলি খেলায়।আমাদের পুন্য ছিল অলস দুপুরে কোনও বুড়ির পাকাচুল বেছে দিয়ে পয়সা রোজগারে যা দিয়ে পাওয়া যেত এক প্লেট দোকানের ঘুগনি কিম্বা একটি আইস্ক্যান্ডি নয়ত কয়েকটি বিশুদ্ধ সিগারেট লজেন্স!
গোঁফে চুলের হাল্কা রেখা,দাড়িতে মায়াবি আলগোছ আর নিষিদ্ধ গোপন ভূমিতে অমোঘ অসোয়াস্তি আমাদের পাপবিদ্ধ করত।কারও মুখে অশ্রাব্য গালাগাল আমাদের হাতের তালুকে শক্ত করে চড় কষানোর উপযুক্ত করে তুলত।কারও অশালীন অঙ্গভঙ্গি আমাদের পীড়িত করত।কোনও অকালপক্কের হস্তমৈথুন কি হাতের বিড়ি ও সিগারেট আমাদের হীণমন্যতায় ভুগতে সাহায্য করত না।এইটুকু পড়েই মনে হোতে পারে আমি আমার সময়টিকে সধবার একাদশীর মতো বর্ণময় বর্ণহীণতায় উন্মুখ।
আমাদের ছিল অপরিসীম কৌতুহল।আমাদের ছিল অপার বিস্ময়।আমাদের ছিল অহেতুক আগ্রহ।আমাদের ছিল অযাচিত উৎকণ্ঠার উৎসাহ।আমাদের ছেলেমানুষী ছিল ছেলেবেলার মতোই।বাজারের পয়সা মেরে তেলেভাজা খেয়ে সারা রাস্তা হা হা করে গন্ধ তাড়ানোর অক্লান্ত অধ্যবসায়।শেষে মরিয়া হয়ে তুলসী পাতা ভক্ষণ।এ যেন বৈষ্ণবকুলের পাঁঠার মাংসে তুলসীপাতা ব্যবহারে নিরামিষ করে তোলার প্রয়াস।আমাদের মধ্যে যারা অকালে পাল্লায় পড়ে সিগারেট খেয়েছে তাদের ধূমপানের স্থান ছিল মশার কামড় খাওয়া বাঁশবন।সদ্য বিবাহিত পুরুষটি যেমন উত্তেজনার নিরোধ ক্রয় করত দূরের কোনও ওষুধের দোকানেই।মেয়েদের মাসের যন্ত্রণা মেলা থাকত অন্দরের আড়ালে।আজকের মতো প্রকাশ্য রাস্তার ডাস্টবিনে মাড়িয়ে যেতে নয়।
আমাদের যৌনতা এসেছে কালের স্বাভাবিক গতিময়তায়।সদ্য বিবাহিত দম্পতির বালিশের তলায় লুকিয়ে রাখা বটতলা প্রকাশকের সস্তা ছাপা “জীবন যৌবন” বইয়ের পাতায়।নয়ত সদ্য কেনা গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকার “শীঘ্র পতন?দ্রুত স্খলন?স্ব্প্নদোষ?ধাতু দৌর্বল্য?অনিয়মিত মাসিক?যৌবন ধরে রাখার অমোঘ বটিকা!”বিজ্ঞাপনে। পঞ্জিকার “মায়াদর্পণ” অর্ডার দিয়ে কেউ কাউকে বশ করেছিল কি না জানা নেই।তখন যদি আজকের মতো ‘স্ন্যাপডিল’ কি ‘ফ্লিপকার্ট’ থাকত কী হোতো জানি না!তবে জড়িবুটি,তাগা-তাবিজ,জল পড়া,বিপত্তারিণীর ডোর তখন ছিল এখন যেন একটু বেশিই আছে।
আমরা নিষিদ্ধ খাদ্যাভ্যাসে সিদ্ধ হয়েছি প্রয়োজনের তাগিদে,সারাদিনের অভূক্তির চেয়ে সস্তার পুষ্টিতে লাভ ছিল,লোকসান ছিল না।মদ্যপানের আসক্তি কি কৌতুহল উচ্চমাধ্যমিকের পর।আমার কবি বন্ধুরা কি চলচ্চিত্র চর্চাকারী চাকুরীজীবীরা চোলাই কি বাংলা খেত জাতে উঠতে।শক্তি চট্টোপাধ্যায় কিম্বা ঋত্বিক ঘটক হোতে।উচ্ছন্নে যাবার সহজ পথে ধেঁধেছে অনেকেই।আবার দু একটি স্ফুলিঙ্গও যে জেগে ওঠেনি তা বলি কী করে?
আমরা নিষ্ঠুর হয়েছি মাছ কাটার কালে কি মুরগীর মাথায় ঠোনা মেরে ছাল ছাড়িয়ে আর পুজোর বলি দেখে।আজকের মতো হর্ষকাম ও মর্ষকাম প্রায় দুষ্প্রাপ্য ছিল তখন।গণ-টোকাটুকি,গণ-পিটুনি দেখেছি রাজনৈতিক অস্থিরতায়।গণ-হত্যাও দেখেছি রাজনৈতিক মদতপুষ্ট দাদা ও পুলিশগিরিতে।বোতল ভাঙতে দেখেছি ল্যাম্পপোস্টের গায়ে নেশায়চুর মোদোমাতালকে।বৌ পেটানো বর দেখেছি।বর পেটানো বৌও দেখেছি খুব একটা কম নয়।সিফিলিস-গনেরিয়ার রোগী দেখেছি ডাক্তারের ডিস্পেন্সারিতে ঘরে ঘরে নয়।
মনোবিদ ধীরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলি বলেছিলেন সংবাদ মাধ্যম ও টেলিভিশনের কর্তাদের-“আপনারা যত ইচ্ছা যৌনতা দেখান।যৌনবিকৃ্তি দেখাবেন না।দোহাই আপনাদের ভায়োলেন্স দেখানো থেকে বিরত থাকুন।ওটাই সমাজকে ক্রাইম আর ক্রিমিন্যালের ডেরা করে তুলবে!”

হায় কবিরাই একা সত্যদ্রষ্টা হন না।