MON KHEROR KHATA

MON KHEROR KHATA
Memories

মঙ্গলবার, ১৫ মে, ২০১৮

মন খেরোর খাতা
তরণীসেন বধ পালা
সলিল সরকার
এই দু দিনে আমাদের করা যাত্রাপালা ও প্রযোজনা নিয়ে এতো আলোচনায় আমি অভিভূত কেন না এই প্রযোজনায় যুক্ত মানুষজন লেখাটার সংগে নতুন করে যোগ দিয়ে ইতিহাস সম্পূর্ণ করতে সাহায্য করছে।
প্রথমেই গৌরবন্ধুর কথা বলি গৌর আমাদের সমবয়সী হলেও বিভাগে আমাদের জুনিয়র ছিল।পরে কলকাতা দূরদর্শনে চাকরি পায়।ওর দিদি গৌরী আমাদের সংগে পড়ত।যদ্দুর মনে পড়ছে গৌর ও একটা চরিত্র করত।আর গৌর যেটা লিখেছে সেটাও ঠিক কেন না আগেই বলেছি শৈশবে দেখা যাত্রাপালার মতো এখানেও পালার শুরুতে আইটেম ডান্স ছিল।
কনসার্ট এ ছিল ফ্লুট, ক্ল‍্যারিওনেট, ভায়োলিন, তবলা,ঝাঁঝ,কাঁসর,হারমোনিয়াম আর এফেক্ট।অভিনয়ে সাবেকি ধারা আনার চেষ্টা ছিল।সাজসজ্জা, পোশাক এসবেও যত্নবান ছিলেন গণেশবাবু।
অলোকের কথা আগেই লিখেছি।অলোক কিছু কথা মনে করিয়েও দিয়েছে।যেভাবে অপরূপ মনে করাল।অপরূপের বাবা একটা পত্রিকা চালাতেন যেখানে আমি প্রবন্ধ লিখেছি।অপরূপ যাত্রা ও পরে প্রাইভেট চ‍্যানেলে যুক্ত হয়।
দেবাশিস ও অরুণীতা শূদ্রকের সংগে যুক্ত হয়েছিল আর বহুরূপীতেও ছিল অরুণীতা।দেবাশিস নাট‍্যশোধে ও পরে রবীন্দ্রভারতীতে অধ‍্যাপক হয়।মানসী আমাদের জুনিয়র আর প্রতিমা আমাদের সংগে পড়তে আসার আগে থেকেই বিভিন্ন দলে অভিনয় করত।
পলাশ ফোটোগ্রাফিটা নেশা থেকে পেশায় পাল্টে নেয়।ইংরেজি নাটকের সংগে যুক্ত ছিল।অমিতাভ গণকৃষ্টি নাট‍্য দলের প্রধান।বিজয় বেথুয়াডহরীর ছেলে।প্রতীক পড়তে পড়তেই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ছিল।এখানে অনেকের কথাই উল্লেখ করিনি তারা তেমন উল্লেখযোগ্য ছিল না এমনটি নয়।আমি সামগ্রিক ইতিহাস উস্কে দিতে চেয়েছিলাম।অভিনয়ে গণেশবাবু পেশাদারী প্রথায় বিকল্প রেখেছিলেন যার কারণেই অনেকেই নাম বিভ্রান্তিতে পড়ছেন।
দেবেশ বিভাগে পড়তে এলেও ফুটবল খেলাতেই বেশি আগ্রহ ছিল।ওকে বহুরূপীতে আমরাই জোর করে পাঠাই।এখন দেবেশ প্রতিষ্ঠানের ও প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা।
এই পালায় হ‍্যাজাকের আলো ব‍্যবহার সবাই খুব উপভোগ করেছিলেন।প্রবেশ প্রস্থান আদি প্রথাতেই হয়েছিল।তবে সেকালের যাত্রার মতো প্রবেশ ও প্রস্থান কালে "গেট" নেওয়া ছিল না।
এই গেট নেওয়া ব‍্যাপারটা আজকের প্রজন্মের জানার কথা নয়।মঞ্চে অভিনয় করে প্রস্থান কালে কিনারে এসে অতিরিক্ত ভঙ্গিতে সংলাপ ও কসরৎ দেখানো ছিল হাততালি কুড়ানোর কৌশল।
এই প্রযোজনাগুলি পঠনপাঠনের অঙ্গ হলেও বাস্তব জীবনেও কাজে লেগেছে তা আজকের প্রতিক্রিয়ায় প্রমাণিত হোলো।মন খেরোর খাতা এইখানেই সফল।
মন খেরোর খাতা
সলিল সরকার
জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে যাত্রাপালার চল অনেকদিনের।রবি ঠাকুরের কালে গোপাল উড়ের যাত্রা কবিকে গান লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিল।
বিদ‍্যাসুন্দর পালার সেই গান "ওই দেখা যায় বাড়ি আমার চারদিকে মালঞ্চ বেড়া।ভ্রমরেতে গুনগুন্ করে।কোকিলেতে দিচ্ছে সাড়া।" হয়ে গেল "ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে।" কিংবা "দুজনে দেখা হোলো মধুযামিণীরে।"
সেই ঠাকুরবাড়ি থেকে যাত্রা নির্বাসিত হয়েছিল।আমরা ছাত্রাবস্থায় আবার ফিরিয়ে এনেছিলাম।মহর্ষি ভবনের উঠোন জুড়ে পরপর কয়েকবার গণেশবাবুর পরিচালনায় আমরা করেছিলাম "তরণীসেন বধ" পালা। উঠোনের মাঝখানে বসেছিল আসর।চারকোনায় রাখা হয়েছিল হ‍্যাজাকের বাতি পুরানো মেজাজ ফিরিয়ে আনার জন‍্যে।পোশাক অভিনয় মঞ্চ আলো রূপসজ্জা সংগীত সবেতেই পুরানো আমেজ আনা হয়েছিল।
যাত্রার শুরুতে কনসার্ট।তার ও আগে অধিকারী সেজে নাটকের পাণ্ডুলিপি হাতে বসতাম আসরের একপাশে।একটা পেটানো ঘণ্টায় জানাতাম সময়।থার্ড বেলে শুরু হতো পিলুরাগে বৃন্দাবন।সেখানে ক্ল‍্যারিওনেট, বাঁশি, ঢোল,খোল,হারমোনিয়াম, বেহালা,ঝাঁঝ,সব থাকত।
অভিনয়ে দেবেশ রায়চৌধুরী আমি কখনও অধিকারী আবার অন‍্য চরিত্রে।এ বাদে অরুণীতা মজুমদার(প্রখ্যাত গায়ক নায়ক রবীন মজুমদারের ছোট মেয়ে),অলোক চন্দ্র, অপরূপ গাঙ্গুলি, দেবাশিস রায়চৌধুরী, সমীর, প্রতীক আরও অনেকে।
বিশ্বদেব দত্ত গণেশবাবুর সহকারী ছিল।বিশ্ব আজ আর নেই।
প্রতিটি শোয়েই হাউস থুড়ি উঠোন ফুল থাকত। ঠাকুর বাড়ির উঠোনের চারপাশ ছাড়াও দোতলার বারান্দায় বসে দাঁড়িয়ে দেখতেন।
কলকাতার অনেক নাট‍্যজন এই প্রযোজনা এসে দেখেছিলেন।আর রাধা স্টুডিয়োতে আসর বসিয়ে কাজ করেছিলাম আমরা।সে এক যুগান্তকারী প্রযোজনা।যারা দেখেছেন তারাই বলেছেন।
পলাশ আমার সহপাঠী বন্ধু এই ছবি তুলে ইতিহাস ধরে রেখেছিল সেলুলয়েডের ক‍্যানভাসে।না হলে স্মৃতি ছাড়া সব হারিয়ে যেত।হয়তো কলকাতার দূরদর্শনে আছে সাদা কালোর চলমান ছবি হয়ে।একবার ফিরে দেখলে হোতো।তখন বিভাস চক্রবর্তী ছিলেন প্রযোজক।সুব্রত মুখোপাধ্যায় ছিলেন।আর ছিলেন ধ্রুব মিত্র।তরুণ রায়,কুমার রায় খুব উৎসাহ জুগিয়ে ছিলেন।
এটা ১৯৮১/৮২ র কথা।এই কথাগুলো লিখলাম তখনকার মান বোঝাতে ও যাদের সান্নিধ্য পেয়েছি সেই ঋণ স্বীকৃতিতে।আজকের মতো ঢাক পেটাতে ও মিথ‍্যায় মজতে নয়।
লাম "তরণীসেন বধ" পালা। উঠোনের মাঝখানে বসেছিল আসর।চারকোনায় রাখা হয়েছিল হ‍্যাজাকের বাতি পুরানো মেজাজ ফিরিয়ে আনার জন‍্যে।পোশাক অভিনয় মঞ্চ আলো রূপসজ্জা সংগীত সবেতেই পুরানো আমেজ আনা হয়েছিল।
যাত্রার শুরুতে কনসার্ট।তার ও আগে অধিকারী সেজে নাটকের পাণ্ডুলিপি হাতে বসতাম আসরের একপাশে।একটা পেটানো ঘণ্টায় জানাতাম সময়।থার্ড বেলে শুরু হতো পিলুরাগে বৃন্দাবন।সেখানে ক্ল‍্যারিওনেট, বাঁশি, ঢোল,খোল,হারমোনিয়াম, বেহালা,ঝাঁঝ,সব থাকত।
অভিনয়ে দেবেশ রায়চৌধুরী আমি কখনও অধিকারী আবার অন‍্য চরিত্রে।এ বাদে অরুণীতা মজুমদার(প্রখ্যাত গায়ক নায়ক রবীন মজুমদারের ছোট মেয়ে),অলোক চন্দ্র, অপরূপ গাঙ্গুলি, দেবাশিস রায়চৌধুরী, সমীর, প্রতীক আরও অনেকে।
বিশ্বদেব দত্ত গণেশবাবুর সহকারী ছিল।বিশ্ব আজ আর নেই।
প্রতিটি শোয়েই হাউস থুড়ি উঠোন ফুল থাকত। ঠাকুর বাড়ির উঠোনের চারপাশ ছাড়াও দোতলার বারান্দায় বসে দাঁড়িয়ে দেখতেন।
কলকাতার অনেক নাট‍্যজন এই প্রযোজনা এসে দেখেছিলেন।আর রাধা স্টুডিয়োতে আসর বসিয়ে কাজ করেছিলাম আমরা।সে এক যুগান্তকারী প্রযোজনা।যারা দেখেছেন তারাই বলেছেন।
পলাশ আমার সহপাঠী বন্ধু এই ছবি তুলে ইতিহাস ধরে রেখেছিল সেলুলয়েডের ক‍্যানভাসে।না হলে স্মৃতি ছাড়া সব হারিয়ে যেত।হয়তো কলকাতার দূরদর্শনে আছে সাদা কালোর চলমান ছবি হয়ে।একবার ফিরে দেখলে হোতো।তখন বিভাস চক্রবর্তী ছিলেন প্রযোজক।সুব্রত মুখোপাধ্যায় ছিলেন।আর ছিলেন ধ্রুব মিত্র।তরুণ রায়,কুমার রায় খুব উৎসাহ জুগিয়ে ছিলেন।
এটা ১৯৮১/৮২ র কথা।এই কথাগুলো লিখলাম তখনকার মান বোঝাতে ও যাদের সান্নিধ্য পেয়েছি সেই ঋণ স্বীকৃতিতে।আজকের মতো ঢাক পেটাতে ও মিথ‍্যায় মজতে নয়।
মন খেরোর খাতা
তরণীসেন বধ পালা
সলিল সরকার
এই দু দিনে আমাদের করা যাত্রাপালা ও প্রযোজনা নিয়ে এতো আলোচনায় আমি অভিভূত কেন না এই প্রযোজনায় যুক্ত মানুষজন লেখাটার সংগে নতুন করে যোগ দিয়ে ইতিহাস সম্পূর্ণ করতে সাহায্য করছে।
প্রথমেই গৌরবন্ধুর কথা বলি গৌর আমাদের সমবয়সী হলেও বিভাগে আমাদের জুনিয়র ছিল।পরে কলকাতা দূরদর্শনে চাকরি পায়।ওর দিদি গৌরী আমাদের সংগে পড়ত।যদ্দুর মনে পড়ছে গৌর ও একটা চরিত্র করত।আর গৌর যেটা লিখেছে সেটাও ঠিক কেন না আগেই বলেছি শৈশবে দেখা যাত্রাপালার মতো এখানেও পালার শুরুতে আইটেম ডান্স ছিল।
কনসার্ট এ ছিল ফ্লুট, ক্ল‍্যারিওনেট, ভায়োলিন, তবলা,ঝাঁঝ,কাঁসর,হারমোনিয়াম আর এফেক্ট।অভিনয়ে সাবেকি ধারা আনার চেষ্টা ছিল।সাজসজ্জা, পোশাক এসবেও যত্নবান ছিলেন গণেশবাবু।
অলোকের কথা আগেই লিখেছি।অলোক কিছু কথা মনে করিয়েও দিয়েছে।যেভাবে অপরূপ মনে করাল।অপরূপের বাবা একটা পত্রিকা চালাতেন যেখানে আমি প্রবন্ধ লিখেছি।অপরূপ যাত্রা ও পরে প্রাইভেট চ‍্যানেলে যুক্ত হয়।
দেবাশিস ও অরুণীতা শূদ্রকের সংগে যুক্ত হয়েছিল আর বহুরূপীতেও ছিল অরুণীতা।দেবাশিস নাট‍্যশোধে ও পরে রবীন্দ্রভারতীতে অধ‍্যাপক হয়।মানসী আমাদের জুনিয়র আর প্রতিমা আমাদের সংগে পড়তে আসার আগে থেকেই বিভিন্ন দলে অভিনয় করত।
পলাশ ফোটোগ্রাফিটা নেশা থেকে পেশায় পাল্টে নেয়।ইংরেজি নাটকের সংগে যুক্ত ছিল।অমিতাভ গণকৃষ্টি নাট‍্য দলের প্রধান।বিজয় বেথুয়াডহরীর ছেলে।প্রতীক পড়তে পড়তেই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ছিল।এখানে অনেকের কথাই উল্লেখ করিনি তারা তেমন উল্লেখযোগ্য ছিল না এমনটি নয়।আমি সামগ্রিক ইতিহাস উস্কে দিতে চেয়েছিলাম।অভিনয়ে গণেশবাবু পেশাদারী প্রথায় বিকল্প রেখেছিলেন যার কারণেই অনেকেই নাম বিভ্রান্তিতে পড়ছেন।
দেবেশ বিভাগে পড়তে এলেও ফুটবল খেলাতেই বেশি আগ্রহ ছিল।ওকে বহুরূপীতে আমরাই জোর করে পাঠাই।এখন দেবেশ প্রতিষ্ঠানের ও প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা।
এই পালায় হ‍্যাজাকের আলো ব‍্যবহার সবাই খুব উপভোগ করেছিলেন।প্রবেশ প্রস্থান আদি প্রথাতেই হয়েছিল।তবে সেকালের যাত্রার মতো প্রবেশ ও প্রস্থান কালে "গেট" নেওয়া ছিল না।
এই গেট নেওয়া ব‍্যাপারটা আজকের প্রজন্মের জানার কথা নয়।মঞ্চে অভিনয় করে প্রস্থান কালে কিনারে এসে অতিরিক্ত ভঙ্গিতে সংলাপ ও কসরৎ দেখানো ছিল হাততালি কুড়ানোর কৌশল।
এই প্রযোজনাগুলি পঠনপাঠনের অঙ্গ হলেও বাস্তব জীবনেও কাজে লেগেছে তা আজকের প্রতিক্রিয়ায় প্রমাণিত হোলো।মন খেরোর খাতা এইখানেই সফল।
২৫ বৈশাখ
সলিল সরকার
সত্তরের উত্তাল কলকাতায় রবীন্দ্রনাথ নিয়ে বড়ো বিড়ম্বনা ছিল আমাদের।একদিকে রাজনীতি বিপরীতে তাঁর গান।সে এক অপূর্ব দোলাচল।আর তাই তাতে ও দ্বান্দ্বিকতায় আরও আরও ডুবতে থাকা।উত্তর মেলেনি আজও।
জোড়াসাঁকোর ২৫ বৈশাখ ছিল বেশ বিচিত্র।সারা কলকাতার কজনই বা মনে রাখত সেই দিনটা।তবলাপট্টি পেরিয়ে বা রামমন্দির পাশে রেখে ঢুকতে হোতো ঠাকুর বাড়িতে।যে বাড়ির প্রতিটি ঘর,ঘরের কোণ,কাঠের সিঁড়ি, রেলিং আমার চেনা।হাজার মানুষের ভীড়ে হাসফাস্ দুপুরে সদ‍্য প্রকাশিত কবিতা হাতে কবিরা।একে একে গেয়ে যাচ্ছেন আমারই প্রিয় শিল্পীরা।অনুষ্ঠান শেষে সবাই ছুটবে রবীন্দ্রসদনে।আর আমরা কর্তব‍্যের শেষে জমাটি আড্ডায়।
সন্ধ‍্যা নামলে উঠোনে অনুষ্ঠান।অমিয়া ঠাকুর, শৈলেন দাস, মেনকা ঠাকুর কে নেই?
শান্তিনিকেতনে সবটাই একেবারে অন‍্যরকম। প্রায় সবাই চেনা আর অনেক অচেনাকে ঠিক আলাদা করে না দেখে একাকার করার আনন্দ।আবার কতো মানুষ তাকে খুঁজে ফিরছে উপাসনা গৃহে,মাধবীবিতান, ঘণ্টাতলায় পান্থশালায়, ছাতিমতলা, গৌরপ্রাঙ্গণে।
প্রতিদিন সূর্য ওঠে তবু্ সে নিত্য নতুন।এও তাই।
ফিরে ফিরে আসে ২৫ বৈশাখ, বাইশে শ্রাবণ।