আমি ঠিক কার মতো?
সলিল সরকার
কথাটা নেহাৎ খেলাচ্ছলে লিখিনি।ইদানিং এটা আমাকে ভাবাচ্ছে।আজ শান্তিনিকেতনে আসার সময় দ্বারোন্দার পার্থ,অনুপম আর চব্বিশ পরগণার বিভাসের সংগে দেখা হোলো।অনুপম আমার সাম্প্রতিক "মন খেরোর খাতা"র লেখার উল্লেখ করল যেখানে লিখেছিলাম "আমি কোনদিনই সাপ ও ব্যাঙের মুখে চুমু খাইনি"।পার্থ বলল যারা এটা প্রকাশ্যে বলে তারাই তার উল্টোটা করে।
আমার মনে হোলো সত্যিই তো।ওর দোষ কী!কতো মানুষ সারাজীবন তৈল মর্দন করেই কী বলে আমি কোনদিন কাউকে তেল মারিনি।পুরস্কার হাতে নিয়ে বলে এটার জন্যে কোনদিন তদ্বির করিনি।অনুদান নিয়ে বলে আহা আমাকে দিলে আমি কী করব।না পেলে বলে সব স্বজনপোষণ চলছে।
একবার (১৯৭৭ থেকে ১৯৮৬ অব্দি যে নাট্য সংগঠনে ছিলাম)আমরা কেন্দ্রীয় অনুদান পেলাম আগের প্রযোজনার খ্যাতিতে।পরের প্রযোজনা অসাধারণ হয়ে উঠতে গিয়েও হোলো না।দলে নানান টালমাটাল চলছে।আমি নাটক নিয়ে পড়তে গিয়ে দুটি নাটক লিখে ফেললাম।"আবরণ"ও "প্রবহতি"।প্রায় বিনা বিজ্ঞাপনে বেশ কয়েকটি শো হোলো।আমার মাস্টারমশায় তরুণ রায় একদিন ক্লাসের শেষে বললেন-হ্যাঁ রে এবারও অনুদানের জন্যে আবেদন করে দে।আমি আছি কমিটিতে।পেয়ে যাবি।
আমি বললাম-ভালো নাটক লেখা হচ্ছেনা টাকা নিয়ে কী করব?
তরুণ বাবু অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে সামনে কুমারদাকে পেয়ে-কুমার এ ছেলে কী বলে শুনুন।
আমি দলের ঘরে এসে সে কথা বলতে কেউ আমাকে সেদিন তিরস্কার করেননি, বরং সস্নেহে তাকিয়ে ছিলেন।সেটা ছিল আশি বিরাশি সাল।আজকের কোনোও ছেলে যদি এ কাণ্ড ঘটায় তাকে দল বহিষ্কার করবে তৎক্ষণাৎ।নয়ত ওই ছেলেটিই নতুন দল গড়ে অনুদান নিতে আকুল হয়ে উঠবে।
এসব শুনে মনে হতে পারে ওই সময় দলাদলি ছিল না,খাওয়া খাওয়ি ছিল না।হলের ডেট নিয়ে কাঠি ও কাটাকুটি খেলা ছিল না।সবাই সবাইকে দেখলেই গেয়ে উঠত-আবার দেখা যদি হোলো সখা প্রাণের মাঝে আয়"।না।
তখনও ছিল তবে কিঞ্চিৎ ঘোমটার আড়ালে।কল শোয়ের জন্যে কেউ এলে সবাই সবার নাম বলত।সাতদিন নাটকের উৎসব হোতো।ছোট বড়ো মাঝারি যে কোনোও দলের জন্মদিনে দলের ঘর ফুলের স্তবক আর শুভেচ্ছায় ভরে যেত।শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে আড্ডা, রাসবিহারীর আড্ডা অনেক অনেক ভালো নাটকের জন্ম দিয়েছে।কোনও দল বিজ্ঞাপনের টাকা জোগাড় করতে না পারলে আর এক দল সাহায্য করেছে।হলের টাকা, হলের ডেট ভাগাভাগি করেছে।সব দলের ছেলে মেয়ে দল বেঁধে সব দলের নাটক টিকিট কেটে দেখতে গেছে।এ দলের টিকিট ও দল বেচেছে।সুব্রত পালের মতো কিছু নাট্যসর্বস্ব মানুষ উপযাচক হয়ে সাহায্য করেছে।শম্ভু দা ঘুপচি ঘরে ঘামতে ঘামতেই নাটক আর নাট্য নিয়ে আলোচনা করছেন।মোহিত দা নতুন নাটক পড়ে শোনাচ্ছেন।সত্যজিৎ রায়,মৃণাল সেন নাটক দেখতে আসছেন।কতো বিখ্যাত শিল্পী চুপিসাড়ে নাটক দেখে গেছেন জেনেছি অনেক পরে।
সম্প্রতি স্বাগতালক্ষ্মী রবীন্দ্রনাথ এর গানে সুর দিয়ে গেয়ে শোনাল
"আমার হারিয়ে যাওয়া দিন,আর কী ফিরে পাব তারে"।সুর করেছে ভৈরবী রাগে।আমি সেই ভোরের দিকে তাকিয়ে আছি রাত্রির অন্ধকারেই।
সলিল সরকার
কথাটা নেহাৎ খেলাচ্ছলে লিখিনি।ইদানিং এটা আমাকে ভাবাচ্ছে।আজ শান্তিনিকেতনে আসার সময় দ্বারোন্দার পার্থ,অনুপম আর চব্বিশ পরগণার বিভাসের সংগে দেখা হোলো।অনুপম আমার সাম্প্রতিক "মন খেরোর খাতা"র লেখার উল্লেখ করল যেখানে লিখেছিলাম "আমি কোনদিনই সাপ ও ব্যাঙের মুখে চুমু খাইনি"।পার্থ বলল যারা এটা প্রকাশ্যে বলে তারাই তার উল্টোটা করে।
আমার মনে হোলো সত্যিই তো।ওর দোষ কী!কতো মানুষ সারাজীবন তৈল মর্দন করেই কী বলে আমি কোনদিন কাউকে তেল মারিনি।পুরস্কার হাতে নিয়ে বলে এটার জন্যে কোনদিন তদ্বির করিনি।অনুদান নিয়ে বলে আহা আমাকে দিলে আমি কী করব।না পেলে বলে সব স্বজনপোষণ চলছে।
একবার (১৯৭৭ থেকে ১৯৮৬ অব্দি যে নাট্য সংগঠনে ছিলাম)আমরা কেন্দ্রীয় অনুদান পেলাম আগের প্রযোজনার খ্যাতিতে।পরের প্রযোজনা অসাধারণ হয়ে উঠতে গিয়েও হোলো না।দলে নানান টালমাটাল চলছে।আমি নাটক নিয়ে পড়তে গিয়ে দুটি নাটক লিখে ফেললাম।"আবরণ"ও "প্রবহতি"।প্রায় বিনা বিজ্ঞাপনে বেশ কয়েকটি শো হোলো।আমার মাস্টারমশায় তরুণ রায় একদিন ক্লাসের শেষে বললেন-হ্যাঁ রে এবারও অনুদানের জন্যে আবেদন করে দে।আমি আছি কমিটিতে।পেয়ে যাবি।
আমি বললাম-ভালো নাটক লেখা হচ্ছেনা টাকা নিয়ে কী করব?
তরুণ বাবু অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে সামনে কুমারদাকে পেয়ে-কুমার এ ছেলে কী বলে শুনুন।
আমি দলের ঘরে এসে সে কথা বলতে কেউ আমাকে সেদিন তিরস্কার করেননি, বরং সস্নেহে তাকিয়ে ছিলেন।সেটা ছিল আশি বিরাশি সাল।আজকের কোনোও ছেলে যদি এ কাণ্ড ঘটায় তাকে দল বহিষ্কার করবে তৎক্ষণাৎ।নয়ত ওই ছেলেটিই নতুন দল গড়ে অনুদান নিতে আকুল হয়ে উঠবে।
এসব শুনে মনে হতে পারে ওই সময় দলাদলি ছিল না,খাওয়া খাওয়ি ছিল না।হলের ডেট নিয়ে কাঠি ও কাটাকুটি খেলা ছিল না।সবাই সবাইকে দেখলেই গেয়ে উঠত-আবার দেখা যদি হোলো সখা প্রাণের মাঝে আয়"।না।
তখনও ছিল তবে কিঞ্চিৎ ঘোমটার আড়ালে।কল শোয়ের জন্যে কেউ এলে সবাই সবার নাম বলত।সাতদিন নাটকের উৎসব হোতো।ছোট বড়ো মাঝারি যে কোনোও দলের জন্মদিনে দলের ঘর ফুলের স্তবক আর শুভেচ্ছায় ভরে যেত।শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে আড্ডা, রাসবিহারীর আড্ডা অনেক অনেক ভালো নাটকের জন্ম দিয়েছে।কোনও দল বিজ্ঞাপনের টাকা জোগাড় করতে না পারলে আর এক দল সাহায্য করেছে।হলের টাকা, হলের ডেট ভাগাভাগি করেছে।সব দলের ছেলে মেয়ে দল বেঁধে সব দলের নাটক টিকিট কেটে দেখতে গেছে।এ দলের টিকিট ও দল বেচেছে।সুব্রত পালের মতো কিছু নাট্যসর্বস্ব মানুষ উপযাচক হয়ে সাহায্য করেছে।শম্ভু দা ঘুপচি ঘরে ঘামতে ঘামতেই নাটক আর নাট্য নিয়ে আলোচনা করছেন।মোহিত দা নতুন নাটক পড়ে শোনাচ্ছেন।সত্যজিৎ রায়,মৃণাল সেন নাটক দেখতে আসছেন।কতো বিখ্যাত শিল্পী চুপিসাড়ে নাটক দেখে গেছেন জেনেছি অনেক পরে।
সম্প্রতি স্বাগতালক্ষ্মী রবীন্দ্রনাথ এর গানে সুর দিয়ে গেয়ে শোনাল
"আমার হারিয়ে যাওয়া দিন,আর কী ফিরে পাব তারে"।সুর করেছে ভৈরবী রাগে।আমি সেই ভোরের দিকে তাকিয়ে আছি রাত্রির অন্ধকারেই।