মন খেরোর খাতা এবং বুকের
অ-সুখ
সলিল সরকার
আজ খেরোর খাতায় যা নিয়ে
লিখতে ইচ্ছে হোলো তা নারীর স্তন নয়,স্তনের অ-সুখ।বেঁচে থাকার আদিকাল থেকেই
স্তন্যপ্রায়ী প্রাণীদের জন্মানোর পরের কয়েক মাস মায়ের দুধই এক মাত্র ভরসা।আগের
কালে বুড়িরা বলতেন-“যার মা নেই তার মতো অভাগা আর কেউ নেই!”তখন কেউই নারীর স্তন
নিয়ে যৌন চর্চা করত না।
আমি আমার শৈশবের কথা বলতে
পারি সে সময় দেশ-গাঁয়ে একমাত্র অবিবাহিত মেয়েরাই বুক ঢেকে রাখত।বিয়ে হয়ে
গেলে,বিশেষ করে সন্তানের জন্ম দেবার পর তারা আর বুকে অকারণ ঢাকা রাখতেন না।তার
মানে তো এই নয় তাদের সৌন্দর্যবোধ ছিল না বা তারা শরীরচর্চা করতেন না।বরং পোয়াতি
মেয়েদের বুকে দুধ আনার জন্যে দিদিমা-ঠাকুমারা নানান খাদ্য ও পাণীয়-এর সাহায্য
নিতেন।কিশোরী ও যুবতী মায়েরা সামান্য আড়াল রেখেই সন্তানকে স্তন্যপান করাতেন।তখন
পুরুষেরা হামলে পড়ে স্তনদায়িণীর স্তনের দিকে তাকিয়ে থাকত এমনটি সাহিত্যেও স্থান
পায়নি।বরং সভ্যতা যত এগিয়েছে অসভ্যতা ও বিকৃ্তি ততই উইপোকার মতো কুরে কুরে খাচ্ছে
সমাজটাকে।ভাবুন তো যে শিশুটির বয়স মাত্র ছয় কি সাত তাকে কেন যৌনবিকৃ্তির শিকার হতে
হচ্ছে?এই উপমহাদেশে শিশুরাই সবচেয়ে বেশি যৌনবিকৃ্তিতে আক্রান্ত হয়।এর পাশাপাশি অজ্ঞতা
এক বিরাট প্রাচীর।
মনোবিদ ধীরেন্দ্রনাথ
গংগোপাধ্যায় বলেছিলেন আপনারা টেলিভিশনে,সিনেমায় সেক্স দেখান তাতে সমাজ নষ্ট হবে
না।কেন না সেক্স-এর একটা শেষ আছে।কিন্তু দোহাই আপনাদের আপনারা ভায়োলেন্স দেখানো
বন্ধ করুন। প্রকাশ্যে পশুনিধন বন্ধ করুন।শিশু-কিশোরদের সামনে কোনও প্রাণীকে হত্যা
করবেন না।এতে শিশু মনে ছাপ পড়ে।পরবর্তীকালে এক তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়।মনোবিদের কথা
যে কী নির্মম সত্যি ছিল তা আজ আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
আমরা কী তাহলে এই নিয়ে হা
হুতাশ করব আর সোস্যাল মিডিয়ায় আলোচনার ঝড় তুলে আমাদের কর্তব্য সমাপন করব?না কী
আমরা যারা সোস্যাল মিডিয়ার সংগে কোন না কোনও ভাবে যুক্ত তারা কিছু না কিছু
সৃষ্টিশীল কাজ করব ও এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলব?আমার এ সুযোগ এসেছে
কয়েকবার।আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র একবার ‘স্তন্যপান’বিষয়ক প্রচারের জন্য নাটক লেখার
অনুরোধ জানায়।সেবারে “অমৃতধারা” নামের একটি বেতার নাটক লিখেছিলাম যা “স্তন্যপান
দিবস”এ প্রচারিত হয়।
অভিষেক গাংগুলি বহুদিন
থেকেই নানা ধরনের প্রচারমূলক ও তথ্যচিত্র নির্মাণ করে।তার নির্মিত একটি তথ্যচিত্র
যা প্রবাদপ্রতিম মিস শেফালি র উপরে আমি বাঁকা চোখে দেখতে শুরু করে পরে চোখের জল
ধরে রাখতে পারিনি।অভিষেক যখন আমাকে অনুরোধ করল “স্তনের ক্যান্সার” বিষয়ে একটি
চলচ্চিত্রের জন্যে আমাকে চিত্রনাট্য লিখে দিতে হবে যা নিছক তথ্যে ঠাসা নীরস চিত্র
হবে না।শ্রীমতি বিজয়া মুখোপাধ্যায় যিনি এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার পর ও সেরে
ওঠার পর একটি রোজনামচা লেখেন।আমি সেটাকে আশ্রয় করেই আমার লেখা শুরু করি ও শেষ
করি।তাই নিয়ে অভিষেক এক চমৎকার চলচ্চিত্র বানিয়েছে।
আত্মকথন হলেও বলা প্রয়োজন
আমি আমার শৈশবে বড়পিসেমশায়কে,পরে আমার মা কে,বড়জামাইবাবুকে,এক বৌদিকে,ভায়রাভাইকে
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চলে যেতে দেখেছি।সম্প্রতি আমার বন্ধুর স্ত্রী ‘ব্রেস্ট
ক্যান্সার’ আক্রান্ত হয়েও মনের জোরে ও চিকিৎসায় সেরে উঠে সুস্থ আছে।
এখন আমাদের কী
করণীয়?প্রতিটি ছেলে ও মেয়েকে এ বিষয়ে সচেতন করে তোলা।তাদের সংগে খোলা কথা বলে
সমস্যাটা জানা ও সমাধান করা যার সামান্য পদক্ষেপ এই “কুইন অব রোজেস”।