আমার যে দিন ভেসে গেছে......!
সলিল সরকার
বাংলার উনপঞ্চাশ সালের উপকুলীয় ঝড় আর জলোচ্ছাস,পঞ্চাশের মন্বন্তর আমার জন্মের তেরো-বারো বছর আগের দুর্বিপাক।আমার জন্মের কালে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব অনেকটাই কেটে গেছে দেশভাগ,সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা,উদ্বাস্তু উদ্বে্গ আর “এ আজাদি ঝুটা হ্যায়” কমিউনিস্ট আন্দোলনে।যদিও রেখে গিয়েছিল তার রেশ শিল্পী সাহিত্যিকদের শিল্পকলায়,গীতিকার-সুরকারদের সুর আর কথায়,গায়িকা-গায়কের গানে যা ভিকিরিপতি গ্রামেও ছাপ ফেলেছিল।আর ছিল জলবসন্তের দাগের মতো গভীর সামাজিক ক্ষত যা সুদীর্ঘ বাম আন্দোলনও মুছে দিতে পারেনি।
কবুল করতে লজ্জা নেই রবীন্দ্রানুরাগী জ্যাঠাবাবুর কণ্ঠে কোন দিন “নব জীবনের গান” শুনিনি।শুনিনি ইকবালের “সারে জাঁহাসে আচ্ছা......”কিন্তু রেডিয়োতে কি বাড়ির ‘কলের গানে’ শুনেছি “অবাক পৃথিবী অবাক করলে তুমি” কি “পথে এবার নামো সাথী” আর শুনেছি ‘রানার’।শুনেছি বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের পুত্র কাজী সব্যসাচীর উদাত্ত কণ্ঠে “কারার এই লৌহ কপাট”, “কামাল তু নে কামাল কিয়া ভাই” কি “বিদ্রোহী রণক্লান্ত......”।
তবে বাবার কাছে,জ্যাঠাবাবুর আর ঠাকুমার কাছে উনপঞ্চাশ সালের ঝড়ের বিবরণ শুনেছি যখনই সাইক্লোন এসেছে কি অতি বর্ষনে ভেসে গেছে সারা গ্রাম।সেই সময়ের সাময়িক সংকটের কথা শুনেছি কিন্তু “ম্যান-মেড ফেমিন”এর ভয়াবহতা,শহরের পথে পড়ে থাকা সারি সারি লাশ, ‘প্রাণ দাও,ফ্যান দাও’ আর্ত চিৎকারের বিবরন দেখেছি,শুনেছি, পড়েছি তৃপ্তি মিত্রের লেখায়, বিজন ভট্টাচার্যের “নবান্ন” নাটকে,নিমাই ঘোষের“ছিন্নমূল”সিনেমায়,চিত্তপ্রসাদের,জয়নুল আবেদীনের স্কেচে, সুনীল জানার স্থিরচিত্রে,সোমনাথ হোড়ের পেন্টিংয়ে আর জ্যোতিরিন্দ্রনাথ মৈত্রের কবিতা আর ‘নব জীবনের গান’এ,সলিলদার কথায়-সুরে।
ভারতীয় গণনাট্য সংঘের দপ্তরে নিয়মিত কাজের মধ্যেই শুনেছি রেবা রায়চৌধুরির বলিষ্ঠ স্বরে “প্রাণের দেউলে যত বধূরা প্রদীপ জ্বালাবেই” তার পরেই নরেনদার(মুখোপাধ্যায়)ব্যারিটোন ভয়েসে “ঝড়ে ভাঙা ঘর যত বলিষ্ঠ বাহু ওঠাবেই”।তার বেশ কিছু আগেই পড়ে জেনেছি ১৯৪২-এ পূর্ব মেদিনীপুরের প্রায় ৪৫০ স্কোয়ার মাইল ভেসে গিয়েছিল সামুদ্রিক ঝড় আর জলোচ্ছ্বাসে।প্লাবনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ৪০০ স্কোয়ার মাইলেরও বেশি অঞ্চল।৩২০০ স্কোয়ার মাইল বিপুল ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ঝড় আর লাগাতার বৃষ্টিতে।মানুষ মরেছিল চোদ্দ-পনের হাজার।গবাদি পশু মরেছিল কমপক্ষে এক লক্ষ নব্বই হাজার কি তারও বেশি।গ্রাম থেকে শহরে বাঁচবার আশায় পালিয়ে এসেও আত্মসম্মান বজায় রাখতে লুটপাট করেনি,কেড়ে খায়নি।খেটে খাওয়া মানুষেরা শহরের রাস্তায় খুঁটে খেয়েছে।উৎসব-আনন্দের ভোজসভায় প্রবেশ না করে রাস্তার ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট কাড়াকাড়ি করে খেয়েছে নেড়ি কুকুরের সংগে লড়াই করেই।ব্রিটিশ সরকার নীরব থেকেছে।কালোবাজারীরা দু-হাতে টাকা লুটেছে। আড়তদারেরা চড়া দামে মাল বেচেছে সম্পন্ন শহরবাসীদের কাছে।একমাত্র ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি আর ভারতীয় গণনাট্য সংঘ গান গেয়ে,নাটক মঞ্চস্থ করে টাকা,জামাকাপড়,খাদ্য সংগ্রহ করে রিলিফ ফান্ডে জমা দিয়েছে।
ব্রিটিশ রাজ চিত্তপ্রসাদের মুদ্রিত চিত্রশিল্প বাজেয়াপ্ত করে পুড়িয়ে দিয়েছে।অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইনের বেড়াজালে ফেলে নাটকের গতি স্তব্ধ করতে চেয়েছে,পারেনি। রবীন্দ্রনাথের গান দেখিয়েছে পথের দিশা।সুচিত্রা মিত্র,দেবব্রত বিশ্বাস এর কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের গানও হয়ে উঠল বিদ্রোহের গান।কালের অমোঘ নিয়মে মানুষ না খেতে পেয়ে যত মারা গিয়েছিল তার চেয়ে বেশি মারা গেল অনেক দিনের না খাওয়ার পর খেয়ে।মাঠে মাঠে ফসল।ফসল কাটার কেউ নেই।ঘরে ঘরে অপুষ্টিতে ভোগা মানুষ।গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো এলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।রেংগুনে বোমা পড়ল কলকাতা শহরের মানুষ প্রাণ বাঁচাতে পালাল গ্রামে।কালের পরিহাসে গ্রামের মানুষ আশ্রয় দিল শহরবাসীদের,যে শহুরে বাবুরা পথে পথে পড়ে থাকা অভুক্ত মানুষদের মাড়িয়ে বাড়ি ফিরে নিশ্চিন্তে অন্ন তুলেছে মুখে।তারাই প্রাণ ভয়ে পালিয়ে এসেছিল গ্রামে।জন্ম নিল ‘ড্যাংচি বাবু’রা যারা কথায় কথায় বলত “ড্যাম চিপ”।
আমার শৈশবেও এই ‘ড্যাংচি বাবুদের’ আমি দেখেছি।তারা পালা-পার্বণে,দোল-দুর্গোৎসবে বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে সপরিবারে দেশে যেতেন।বাস থেকে নেমেই সামনে যাকেই পেতেন (সে চাষি হোক কি মুনিষ)তাকে ধমকে তার মাথায় বাক্স-প্যাঁটরা চাপিয়ে দিতেন।এই দেখে একবার আমার এক জাঠতুতো দাদা মাথায় কাঁধে-পিঠে ব্যাগ চাপিয়ে তাদের বাড়ি অব্দি যাওয়ার পর বাড়ির মানুষজন দুলুদাকে চিনতে পেরে কোথায় মুখ লুকোবে ভেবে পায় না।শেষে দুলুদার কাছে ক্ষমা চেয়ে পুজোর মিষ্টি খাইয়ে নিস্তার চেয়েছিল।
গ্রামের পুজোয় দূর-দূরান্ত থেকে আত্মীয় কুটুম্ব দেশের বাড়িতে কয়েক দিনের জন্যে ফিরে আসবে এটাই ছিল রেওয়াজ।যার যা সংগতি তাই দিয়েই গ্রামের মানুষ অতিথি আপ্যায়ণে ত্রুটি রাখত না।সহজলভ্য শাক-সব্জি,খাল-বিলের মাছ,বাড়ির ধানের খৈ-মুড়ি,ক্ষেতের আখের আখিগুড় আর পুকুর পাড়ের তালের সারির তাল গুড় দিয়ে মুড়কি।ঘরের গাই-গোরুর দুধের ছানা-দৈ-ঘি।গাওয়া ঘিয়ের লুচি ভাজার গন্ধে আর বাড়ির গাছের নারকেলের নাড়ু-চিত্রকূটে পাড়া জুড়ে মিঠে সুবাস।খাল-বিলের মাছ ভাজা হোলে বিশেষ করে বেলে মাছ,গুলে মাছ,গুড় জাউলি মাছ,পারষে মাছ,নোনা চিংড়ি মাছের গন্ধ পেয়ে অবারিত দ্বা্রের বৈঠকখানায় বসে পড়ত যে কেউ বিনা আমন্ত্রণেই।পেট পুরে দুপুরের খাওয়া খেয়ে তবে তার নিস্তার মিলত।ষষ্ঠীতে নিরামিষ সোনা মুগের ডাল,আলুভাজা,বেগুনভাজা,শাক,শুক্তো,আলুপোস্ত,ছানার ডালনা,আলুবখরার চাটনি।সপ্তমীতে মাছ ভাত।অষ্টমীতে নুচি(লুচি)-কুমড়োর ছক্কা,ছোলার ডাল আর ধোঁকার ডালনা,প্লাস্টিক চাটনি।নবমীতে বলির পাঁঠার মাংস পাড়ায় বিলিয়ে যা পড়ে থাকত তার সংগে বাজার থেকে কিনে এনে তাই দিয়ে সবার পাতে দু-টুকরো মাংস আর চার-টুকরো আলু দিতে পারলেই তৃপ্তির ঢেকুর উঠত।যার পাতে মেটে পড়ত সে ভাগ্যবান।সে সময় কেউ অসুস্থ হলে সে পেত ‘টেংরির জুস’।
যাদের এই সংগতি ছিল না তারাও হীণমন্যতায় না ভুগে এই কয়েকটা দিন আউস ধানের পায়েস তৈরি করত বাড়ির আখের গুড় দিয়ে।মাঠে ‘মুগরি’(বাঁশের তৈরি মাছ ধরার খাঁচা)বসিয়ে কুচো মাছ আর নোনা চিংড়ি ধরত।জলভরা আমন ধানের ক্ষেতে বঁড়শিতে আরশোলা,ঘুরঘুরে পোকা কি জ্যান্ত চিংড়ি টোপ দিয়ে বড়ো বড়ো ট্যাংরা,শোল,ভেটকি ধরত।শোলাকে ছোট ছোট করে কেটে তাতে সুতো বেঁধে কাঁটাতে কেঁচো লাগিয়ে ভাসিয়ে দিত ধান ক্ষেতে।ভোরবেলা সেগুলোকে তুলে দেখত কী মাছ গেঁথেছে সেই ভাসা বঁড়শিতে।প্রায় সব বাড়িতেই কচু,মান কচু,ওল,চুপড়ি আলু, বিচিকলা,নটে শাক,পালং শাক,কাটোয়ার ডাঁটা,বেগুন,লংকা,ঢ্যাঁড়স,ঝিঙে,চিচিঙ্গে,কুদরি, কাঁচা আর পাকা কুমড়ো অঢেল না হোলেও অপ্রতুল ছিল না।এই সময়টা শাপলা-শালুক,গেঁড়ি-গুগলি,কলমি শাক,সজনে পাতা,শুষনি শাক অঢেল ছিল।গুগলির তরকারী কম পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ছিল না।কুমড়োফুল,বকফুলের বড়া আহা কী লোভনীয় যে ছিল।গ্রামের মানুষ এইসব খেয়েই অষ্টমীর সারারাত কয়েক ক্রোশ-মাইল পায়ে হেঁটে ঠাকুর দেখত।কী অফুরান প্রাণশক্তি!কী অনাবিল উচ্ছ্বলতা!
আমাদের বাড়িটাই ছিল একটা ক্লাবের মতো।ছোটোরা সারাদিন-রাত চোর-পুলিশ, ক্যারাম,ব্যাগাডুলি,সাপ-লুডো,রং-মিলান্তি,বাঘবন্দী খেলা খেলতাম।বড়োরা ব্রীজ,ব্রে আর মা-জেঠিমা-কাকিমা-ঠাকুমা খেলত টুয়েন্টি নাইন।শুধু ন’পিসেমশায় একা একা তাসের পেশেন্স খেলতেন আর জর্দা-পান খেতেন।ছোটো কাকা লুকিয়ে লুকিয়ে বিড়ি খেত। মেজপিসি আর চমৎকারী গুড়াকু দিয়ে সময়ে অসময়ে দাঁত মাজত।কেউ কেউ ভাঁড়ার থেকে চুরি করে পুকুর পাড়ে গিয়ে লুকিয়ে খেত আর পেটের ব্যথায় কাৎরাতো। কাড়াকাড়ি পড়ত শারদীয়া সংখ্যা নিয়ে।হুড়োহুড়ি পড়ত বাড়িতে হঠাৎ কোনও অতিথি এলে।আর ঢাকের আওয়াজ থেমে গেলে অলস দুপুরে সবাই দিনের খাওয়ার পাট চুকিয়ে মাদুরে গা এলিয়ে চুপ করে শুনত রেডিয়োয় পুজোর গান-“প্রান্তরের গান আমার,মেঠো সুরের গান আমার”, “আমার গানের স্বরলিপি লেখা রবে”, “একটা গান লিখো আমার জন্যে”, “আকাশ-প্রদীপ বলে দূরের তারার পানে চেয়ে,আমার নয়ন দুটি শুধুই তোমারে চাহে ব্যথার আগুনে গান গেয়ে” এসব গান শুনতে শুনতে কখন যে ঝুপ্ করে সন্ধ্যে নেমে আসত।পশ্চিম আকাশে সাঁঝতারার একটু ওপরে ঝুলত ফালি চাঁদ।হাল্কা হিমে ঝোপেঝাড়ে জোনাকিরা আজকের এল,ই,ডি আলোর মতো টিমটিম করে আলো ছড়াত।শিউলি ফুলের আর হাস্নুহানার গন্ধ ভেসে যেত বাতাসে।আকাশের উত্তরে ভাসত সপ্তর্ষি,দক্ষিণে কালপুরুষ।আর আকাশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত জুড়ে রমণীয় ছায়াপথ।
দশমীর ভোরে আকাশবাণীর গানে “শুকতারা গো,নিও না বিদায়,নিও না......”আজও কানে বাজে।দশমীর দিন শুধু দিনের বেলায় রান্না হোত। দেবীমূর্তি জলে পড়লেই দশমী শুরু হোত না।ঘরের ঠাকুমা পুজোর দালান থেকে শান্তিজল আর অপরাজিতার লতা নিয়ে আসবে।বাড়ির সবাই পা ঢেকে বৈঠকখনায় বসবে।শান্তিজল ছেটানো হবে।তারপর অপরাজিতার বালা পরানো হবে এই মন্ত্র আউড়ে-“জয়দে বরদে দেবি,দশম্যে অপরাজিতে......”।এবার ছোটোরা প্রণাম করবে।বড়োরা করবে কোলাকুলি(পরে জেনেছি এই কোলাকুলি প্রথাটি এসেছে ঈদের থেকে)আর শুরু হবে মিষ্টি বিতরণ।ডানহাত বাড়িয়ে মিষ্টি নেওয়াটাই ছিল সৌজন্য।কিন্তু অধিকের আশায় হাতপাতা কারও পিছনে দাঁড়িয়ে আড়াল থেকে এমন ভাবে হাত বাড়াতাম যেন দুই মানুষের ভিন্ন হাত।বাড়ির প্রণাম সারা হোলে বেরিয়ে পড়া পাড়ার প্রণামে।আমাদের জানা ছিল প্রণামের পর কোন বাড়িতে নিমকি দেবে,কোন বাড়িতে ঘুগ্নি।যে বাড়িতে বয়স্ক-প্রবীণ মানুষজন থাকতেন তারা নিজের হাতে কিছু তৈরি করতে পারতেন না তাই ময়রার দোকান থেকে দরবেশ-সন্দেশ-মিহিদানা-সীতাভোগ আনিয়ে রাখতেন।সেই রাত্রে সবার বাড়িতে যেতাম না।পেট ভরে যাওয়ার কারণে পরের দিনের জন্যে ওই বাড়িগুলো রাখা থাকত।
এইভাবেই কেটে যেত কটা দিন।এবার আমাদের পড়ায় মন বসাতে হবে আর যারা এসেছিল আবার তারা বিসর্জনের বাজনা বাজিয়ে ফিরে যাওয়া ঢাকির দলের প্রায় সংগে সংগেই চাল-নারকেল-নাড়ু ব্যাগে ভরে ফিরে গেলে গ্রামগুলো শোকে মলিন হয়ে পড়বে।এবার অলক্ষ্মী বিদায় করে লক্ষ্মী স্থাপন করে দীপাবলীর প্রদীপ জ্বালিয়ে মরা গ্রামের প্রাণ ফিরিয়ে আনার কাজ।সে আর এক উৎসব।
সলিল সরকার
বাংলার উনপঞ্চাশ সালের উপকুলীয় ঝড় আর জলোচ্ছাস,পঞ্চাশের মন্বন্তর আমার জন্মের তেরো-বারো বছর আগের দুর্বিপাক।আমার জন্মের কালে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব অনেকটাই কেটে গেছে দেশভাগ,সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা,উদ্বাস্তু উদ্বে্গ আর “এ আজাদি ঝুটা হ্যায়” কমিউনিস্ট আন্দোলনে।যদিও রেখে গিয়েছিল তার রেশ শিল্পী সাহিত্যিকদের শিল্পকলায়,গীতিকার-সুরকারদের সুর আর কথায়,গায়িকা-গায়কের গানে যা ভিকিরিপতি গ্রামেও ছাপ ফেলেছিল।আর ছিল জলবসন্তের দাগের মতো গভীর সামাজিক ক্ষত যা সুদীর্ঘ বাম আন্দোলনও মুছে দিতে পারেনি।
কবুল করতে লজ্জা নেই রবীন্দ্রানুরাগী জ্যাঠাবাবুর কণ্ঠে কোন দিন “নব জীবনের গান” শুনিনি।শুনিনি ইকবালের “সারে জাঁহাসে আচ্ছা......”কিন্তু রেডিয়োতে কি বাড়ির ‘কলের গানে’ শুনেছি “অবাক পৃথিবী অবাক করলে তুমি” কি “পথে এবার নামো সাথী” আর শুনেছি ‘রানার’।শুনেছি বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের পুত্র কাজী সব্যসাচীর উদাত্ত কণ্ঠে “কারার এই লৌহ কপাট”, “কামাল তু নে কামাল কিয়া ভাই” কি “বিদ্রোহী রণক্লান্ত......”।
তবে বাবার কাছে,জ্যাঠাবাবুর আর ঠাকুমার কাছে উনপঞ্চাশ সালের ঝড়ের বিবরণ শুনেছি যখনই সাইক্লোন এসেছে কি অতি বর্ষনে ভেসে গেছে সারা গ্রাম।সেই সময়ের সাময়িক সংকটের কথা শুনেছি কিন্তু “ম্যান-মেড ফেমিন”এর ভয়াবহতা,শহরের পথে পড়ে থাকা সারি সারি লাশ, ‘প্রাণ দাও,ফ্যান দাও’ আর্ত চিৎকারের বিবরন দেখেছি,শুনেছি, পড়েছি তৃপ্তি মিত্রের লেখায়, বিজন ভট্টাচার্যের “নবান্ন” নাটকে,নিমাই ঘোষের“ছিন্নমূল”সিনেমায়,চিত্তপ্রসাদের,জয়নুল আবেদীনের স্কেচে, সুনীল জানার স্থিরচিত্রে,সোমনাথ হোড়ের পেন্টিংয়ে আর জ্যোতিরিন্দ্রনাথ মৈত্রের কবিতা আর ‘নব জীবনের গান’এ,সলিলদার কথায়-সুরে।
ভারতীয় গণনাট্য সংঘের দপ্তরে নিয়মিত কাজের মধ্যেই শুনেছি রেবা রায়চৌধুরির বলিষ্ঠ স্বরে “প্রাণের দেউলে যত বধূরা প্রদীপ জ্বালাবেই” তার পরেই নরেনদার(মুখোপাধ্যায়)ব্যারিটোন ভয়েসে “ঝড়ে ভাঙা ঘর যত বলিষ্ঠ বাহু ওঠাবেই”।তার বেশ কিছু আগেই পড়ে জেনেছি ১৯৪২-এ পূর্ব মেদিনীপুরের প্রায় ৪৫০ স্কোয়ার মাইল ভেসে গিয়েছিল সামুদ্রিক ঝড় আর জলোচ্ছ্বাসে।প্লাবনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ৪০০ স্কোয়ার মাইলেরও বেশি অঞ্চল।৩২০০ স্কোয়ার মাইল বিপুল ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ঝড় আর লাগাতার বৃষ্টিতে।মানুষ মরেছিল চোদ্দ-পনের হাজার।গবাদি পশু মরেছিল কমপক্ষে এক লক্ষ নব্বই হাজার কি তারও বেশি।গ্রাম থেকে শহরে বাঁচবার আশায় পালিয়ে এসেও আত্মসম্মান বজায় রাখতে লুটপাট করেনি,কেড়ে খায়নি।খেটে খাওয়া মানুষেরা শহরের রাস্তায় খুঁটে খেয়েছে।উৎসব-আনন্দের ভোজসভায় প্রবেশ না করে রাস্তার ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট কাড়াকাড়ি করে খেয়েছে নেড়ি কুকুরের সংগে লড়াই করেই।ব্রিটিশ সরকার নীরব থেকেছে।কালোবাজারীরা দু-হাতে টাকা লুটেছে। আড়তদারেরা চড়া দামে মাল বেচেছে সম্পন্ন শহরবাসীদের কাছে।একমাত্র ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি আর ভারতীয় গণনাট্য সংঘ গান গেয়ে,নাটক মঞ্চস্থ করে টাকা,জামাকাপড়,খাদ্য সংগ্রহ করে রিলিফ ফান্ডে জমা দিয়েছে।
ব্রিটিশ রাজ চিত্তপ্রসাদের মুদ্রিত চিত্রশিল্প বাজেয়াপ্ত করে পুড়িয়ে দিয়েছে।অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইনের বেড়াজালে ফেলে নাটকের গতি স্তব্ধ করতে চেয়েছে,পারেনি। রবীন্দ্রনাথের গান দেখিয়েছে পথের দিশা।সুচিত্রা মিত্র,দেবব্রত বিশ্বাস এর কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের গানও হয়ে উঠল বিদ্রোহের গান।কালের অমোঘ নিয়মে মানুষ না খেতে পেয়ে যত মারা গিয়েছিল তার চেয়ে বেশি মারা গেল অনেক দিনের না খাওয়ার পর খেয়ে।মাঠে মাঠে ফসল।ফসল কাটার কেউ নেই।ঘরে ঘরে অপুষ্টিতে ভোগা মানুষ।গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো এলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।রেংগুনে বোমা পড়ল কলকাতা শহরের মানুষ প্রাণ বাঁচাতে পালাল গ্রামে।কালের পরিহাসে গ্রামের মানুষ আশ্রয় দিল শহরবাসীদের,যে শহুরে বাবুরা পথে পথে পড়ে থাকা অভুক্ত মানুষদের মাড়িয়ে বাড়ি ফিরে নিশ্চিন্তে অন্ন তুলেছে মুখে।তারাই প্রাণ ভয়ে পালিয়ে এসেছিল গ্রামে।জন্ম নিল ‘ড্যাংচি বাবু’রা যারা কথায় কথায় বলত “ড্যাম চিপ”।
আমার শৈশবেও এই ‘ড্যাংচি বাবুদের’ আমি দেখেছি।তারা পালা-পার্বণে,দোল-দুর্গোৎসবে বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে সপরিবারে দেশে যেতেন।বাস থেকে নেমেই সামনে যাকেই পেতেন (সে চাষি হোক কি মুনিষ)তাকে ধমকে তার মাথায় বাক্স-প্যাঁটরা চাপিয়ে দিতেন।এই দেখে একবার আমার এক জাঠতুতো দাদা মাথায় কাঁধে-পিঠে ব্যাগ চাপিয়ে তাদের বাড়ি অব্দি যাওয়ার পর বাড়ির মানুষজন দুলুদাকে চিনতে পেরে কোথায় মুখ লুকোবে ভেবে পায় না।শেষে দুলুদার কাছে ক্ষমা চেয়ে পুজোর মিষ্টি খাইয়ে নিস্তার চেয়েছিল।
গ্রামের পুজোয় দূর-দূরান্ত থেকে আত্মীয় কুটুম্ব দেশের বাড়িতে কয়েক দিনের জন্যে ফিরে আসবে এটাই ছিল রেওয়াজ।যার যা সংগতি তাই দিয়েই গ্রামের মানুষ অতিথি আপ্যায়ণে ত্রুটি রাখত না।সহজলভ্য শাক-সব্জি,খাল-বিলের মাছ,বাড়ির ধানের খৈ-মুড়ি,ক্ষেতের আখের আখিগুড় আর পুকুর পাড়ের তালের সারির তাল গুড় দিয়ে মুড়কি।ঘরের গাই-গোরুর দুধের ছানা-দৈ-ঘি।গাওয়া ঘিয়ের লুচি ভাজার গন্ধে আর বাড়ির গাছের নারকেলের নাড়ু-চিত্রকূটে পাড়া জুড়ে মিঠে সুবাস।খাল-বিলের মাছ ভাজা হোলে বিশেষ করে বেলে মাছ,গুলে মাছ,গুড় জাউলি মাছ,পারষে মাছ,নোনা চিংড়ি মাছের গন্ধ পেয়ে অবারিত দ্বা্রের বৈঠকখানায় বসে পড়ত যে কেউ বিনা আমন্ত্রণেই।পেট পুরে দুপুরের খাওয়া খেয়ে তবে তার নিস্তার মিলত।ষষ্ঠীতে নিরামিষ সোনা মুগের ডাল,আলুভাজা,বেগুনভাজা,শাক,শুক্তো,আলুপোস্ত,ছানার ডালনা,আলুবখরার চাটনি।সপ্তমীতে মাছ ভাত।অষ্টমীতে নুচি(লুচি)-কুমড়োর ছক্কা,ছোলার ডাল আর ধোঁকার ডালনা,প্লাস্টিক চাটনি।নবমীতে বলির পাঁঠার মাংস পাড়ায় বিলিয়ে যা পড়ে থাকত তার সংগে বাজার থেকে কিনে এনে তাই দিয়ে সবার পাতে দু-টুকরো মাংস আর চার-টুকরো আলু দিতে পারলেই তৃপ্তির ঢেকুর উঠত।যার পাতে মেটে পড়ত সে ভাগ্যবান।সে সময় কেউ অসুস্থ হলে সে পেত ‘টেংরির জুস’।
যাদের এই সংগতি ছিল না তারাও হীণমন্যতায় না ভুগে এই কয়েকটা দিন আউস ধানের পায়েস তৈরি করত বাড়ির আখের গুড় দিয়ে।মাঠে ‘মুগরি’(বাঁশের তৈরি মাছ ধরার খাঁচা)বসিয়ে কুচো মাছ আর নোনা চিংড়ি ধরত।জলভরা আমন ধানের ক্ষেতে বঁড়শিতে আরশোলা,ঘুরঘুরে পোকা কি জ্যান্ত চিংড়ি টোপ দিয়ে বড়ো বড়ো ট্যাংরা,শোল,ভেটকি ধরত।শোলাকে ছোট ছোট করে কেটে তাতে সুতো বেঁধে কাঁটাতে কেঁচো লাগিয়ে ভাসিয়ে দিত ধান ক্ষেতে।ভোরবেলা সেগুলোকে তুলে দেখত কী মাছ গেঁথেছে সেই ভাসা বঁড়শিতে।প্রায় সব বাড়িতেই কচু,মান কচু,ওল,চুপড়ি আলু, বিচিকলা,নটে শাক,পালং শাক,কাটোয়ার ডাঁটা,বেগুন,লংকা,ঢ্যাঁড়স,ঝিঙে,চিচিঙ্গে,কুদরি, কাঁচা আর পাকা কুমড়ো অঢেল না হোলেও অপ্রতুল ছিল না।এই সময়টা শাপলা-শালুক,গেঁড়ি-গুগলি,কলমি শাক,সজনে পাতা,শুষনি শাক অঢেল ছিল।গুগলির তরকারী কম পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ছিল না।কুমড়োফুল,বকফুলের বড়া আহা কী লোভনীয় যে ছিল।গ্রামের মানুষ এইসব খেয়েই অষ্টমীর সারারাত কয়েক ক্রোশ-মাইল পায়ে হেঁটে ঠাকুর দেখত।কী অফুরান প্রাণশক্তি!কী অনাবিল উচ্ছ্বলতা!
আমাদের বাড়িটাই ছিল একটা ক্লাবের মতো।ছোটোরা সারাদিন-রাত চোর-পুলিশ, ক্যারাম,ব্যাগাডুলি,সাপ-লুডো,রং-মিলান্তি,বাঘবন্দী খেলা খেলতাম।বড়োরা ব্রীজ,ব্রে আর মা-জেঠিমা-কাকিমা-ঠাকুমা খেলত টুয়েন্টি নাইন।শুধু ন’পিসেমশায় একা একা তাসের পেশেন্স খেলতেন আর জর্দা-পান খেতেন।ছোটো কাকা লুকিয়ে লুকিয়ে বিড়ি খেত। মেজপিসি আর চমৎকারী গুড়াকু দিয়ে সময়ে অসময়ে দাঁত মাজত।কেউ কেউ ভাঁড়ার থেকে চুরি করে পুকুর পাড়ে গিয়ে লুকিয়ে খেত আর পেটের ব্যথায় কাৎরাতো। কাড়াকাড়ি পড়ত শারদীয়া সংখ্যা নিয়ে।হুড়োহুড়ি পড়ত বাড়িতে হঠাৎ কোনও অতিথি এলে।আর ঢাকের আওয়াজ থেমে গেলে অলস দুপুরে সবাই দিনের খাওয়ার পাট চুকিয়ে মাদুরে গা এলিয়ে চুপ করে শুনত রেডিয়োয় পুজোর গান-“প্রান্তরের গান আমার,মেঠো সুরের গান আমার”, “আমার গানের স্বরলিপি লেখা রবে”, “একটা গান লিখো আমার জন্যে”, “আকাশ-প্রদীপ বলে দূরের তারার পানে চেয়ে,আমার নয়ন দুটি শুধুই তোমারে চাহে ব্যথার আগুনে গান গেয়ে” এসব গান শুনতে শুনতে কখন যে ঝুপ্ করে সন্ধ্যে নেমে আসত।পশ্চিম আকাশে সাঁঝতারার একটু ওপরে ঝুলত ফালি চাঁদ।হাল্কা হিমে ঝোপেঝাড়ে জোনাকিরা আজকের এল,ই,ডি আলোর মতো টিমটিম করে আলো ছড়াত।শিউলি ফুলের আর হাস্নুহানার গন্ধ ভেসে যেত বাতাসে।আকাশের উত্তরে ভাসত সপ্তর্ষি,দক্ষিণে কালপুরুষ।আর আকাশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত জুড়ে রমণীয় ছায়াপথ।
দশমীর ভোরে আকাশবাণীর গানে “শুকতারা গো,নিও না বিদায়,নিও না......”আজও কানে বাজে।দশমীর দিন শুধু দিনের বেলায় রান্না হোত। দেবীমূর্তি জলে পড়লেই দশমী শুরু হোত না।ঘরের ঠাকুমা পুজোর দালান থেকে শান্তিজল আর অপরাজিতার লতা নিয়ে আসবে।বাড়ির সবাই পা ঢেকে বৈঠকখনায় বসবে।শান্তিজল ছেটানো হবে।তারপর অপরাজিতার বালা পরানো হবে এই মন্ত্র আউড়ে-“জয়দে বরদে দেবি,দশম্যে অপরাজিতে......”।এবার ছোটোরা প্রণাম করবে।বড়োরা করবে কোলাকুলি(পরে জেনেছি এই কোলাকুলি প্রথাটি এসেছে ঈদের থেকে)আর শুরু হবে মিষ্টি বিতরণ।ডানহাত বাড়িয়ে মিষ্টি নেওয়াটাই ছিল সৌজন্য।কিন্তু অধিকের আশায় হাতপাতা কারও পিছনে দাঁড়িয়ে আড়াল থেকে এমন ভাবে হাত বাড়াতাম যেন দুই মানুষের ভিন্ন হাত।বাড়ির প্রণাম সারা হোলে বেরিয়ে পড়া পাড়ার প্রণামে।আমাদের জানা ছিল প্রণামের পর কোন বাড়িতে নিমকি দেবে,কোন বাড়িতে ঘুগ্নি।যে বাড়িতে বয়স্ক-প্রবীণ মানুষজন থাকতেন তারা নিজের হাতে কিছু তৈরি করতে পারতেন না তাই ময়রার দোকান থেকে দরবেশ-সন্দেশ-মিহিদানা-সীতাভোগ আনিয়ে রাখতেন।সেই রাত্রে সবার বাড়িতে যেতাম না।পেট ভরে যাওয়ার কারণে পরের দিনের জন্যে ওই বাড়িগুলো রাখা থাকত।
এইভাবেই কেটে যেত কটা দিন।এবার আমাদের পড়ায় মন বসাতে হবে আর যারা এসেছিল আবার তারা বিসর্জনের বাজনা বাজিয়ে ফিরে যাওয়া ঢাকির দলের প্রায় সংগে সংগেই চাল-নারকেল-নাড়ু ব্যাগে ভরে ফিরে গেলে গ্রামগুলো শোকে মলিন হয়ে পড়বে।এবার অলক্ষ্মী বিদায় করে লক্ষ্মী স্থাপন করে দীপাবলীর প্রদীপ জ্বালিয়ে মরা গ্রামের প্রাণ ফিরিয়ে আনার কাজ।সে আর এক উৎসব।
Somenath Chaudhury Eta lekha mone holo na, mone holo chobi dekhlam, shoroter hawa onubhob korlam.
উত্তরমুছুনLike · Reply · 20 mins
Salil Sarkar
Salil Sarkar চেষ্টা ক রে চলেছি!
Like · Reply · 15 mins
Salil Sarkar
Salil Sarkar গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের হেরম্বচন্দ্র মহাবিদ্যালয়ের ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে "অশনি সংকেত ৪২ এর ইতিহাস ও রাজনীতির প্রেক্ষাপটে" বিষয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দিতে গিয়ে আমার এই দশা!
দীপঙ্কর সিংহ এক নিঃশ্বাসে পরে ফেললাম। এই লেখার বিষয়ের গন্ধটা আমার খুব চেনা। বড় কাছের
উত্তরমুছুনUnlike · Reply · 1 · 56 mins
Salil Sarkar
Salil Sarkar ধ ন্যবাদ।স ম্ভব হ লে এর ঠিক আগের লেখাটাও পড়ুন।মতামত দিন।আর ব্লগ ভিজিট ক র লে খুশি হব।
Like · Reply · 1 · 52 mins
Somenath Chaudhury
Somenath Chaudhury Eta lekha mone holo na, mone holo chobi dekhlam, shoroter hawa onubhob korlam.
Unlike · Reply · 1 · 1 hr
Salil Sarkar
Salil Sarkar চেষ্টা ক রে চলেছি!
Like · Reply · 1 hr
Piyali Palit
Piyali Palit ভোরের বেলায় আমরা শিউলিফুল কুড়োতে যেতাম, শিশির ভেজা ঘাসে খালি পা ভিজে উঠত। আগে যাওয়ার একটা প্রতিযোগিতা ছিল - কে কত বেশী ফুল কুড়ল সে নিয়ে। রোদ্দুর ওঠার সাথে সাথে ঘরে ফিরে কোঁচড়ের সব ফুল একসাথে ঢেলে দিয়ে শুরু হত মালা গাঁথার পালা। ঘরের সব ঠাকুরের ছবিতে দিতে হবে যে !
Like · Reply · 21 mins
Salil Sarkar
Salil Sarkar শান্তিনিকেতনে এই সময় শিউলি ফুলের পাশে ছাতিম ফুলও ফোটে।শিউলির মিষ্টি সুবাসের পাশে ছাতিমের তীব্র গন্ধ আবার শুভ্র কাশফুল সেও ফুটে আছে।কী আশ্চর্য এরা সবাই সাদা তবে সিধে নয়।
Like · Reply · 1 · 17 mins
Piyali Palit
Piyali Palit তিন জনের তিন রকম - সত্যি ভেবে দেখিনি আগে ।
Unlike · Reply · 1 · 15 mins
Salil Sarkar
Salil Sarkar শান্তিনিকেতনের পোশাকের মধ্যে শিউলি ফুলের সাদা আর গেরুয়ার প্রকাশ আছে।এই স ময়ের ফুল্গুলো অধিকাংশই শরতের ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের মতোই সাদা।শিউলি-টগর-রজনীগন্ধা-গন্ধরাজ-জুঁই-কাশ-ছাতিম-শালুক-পদ্ম।শুধু অপরাজিতা শরতের আকাশের মতো নীল।এই যাহ শ্বে্তকরবী আর কাঞ্চন ফুলের কথা ব লা হোলো না যে!
Like · Reply · 5 mins
Piyali Palit
Piyali Palit স্থলপদ্ম কোথায় গেল ? সকালে সাদা, সন্ধ্যায় গোলাপি ?
Like · Reply · 3 mins
Salil Sarkar
Salil Sarkar ঠিক ঠিক।এ ছাড়া বাগানের আগাছায় যে ঘাস্ফুল ফুটে থাকত তারাও ছিল কানের দুলের মতো ছোটো ছোটো আর সাদা।
Like · Reply · 1 · Just now
Arghya Mukherjee Ae lekha pare mane hachhe amio jeno sei samaye chale gechhi,pratyek ghatanar gandha jeno ami nije pachhi.komo bishesan diye e lekhake barnana kara jabena.
উত্তরমুছুনUnlike · Reply · 1 · 2 October at 10:05
Rahul Roy Chowdhury
Rahul Roy Chowdhury তোমার এই স্মৃতি, যা তোমার সত্তার অংশ ও বটে, রাখা থাকবে ভবিষ্যতের জন্যে।
Unlike · Reply · 1 · 3 October at 14:09
Sudipto Das
Sudipto Das · Friends with Piyali Palit and 6 others
Ei chhobi gulo dekhe amar mone pore gelo bangla sahitye nana lekhoker chhiattorer monwantorer description ! Shohore agonito mall toiri holeo ei reality/history ke muchhe deoa jabe na. Oi tragedy theke amra shiksha nite perechhi ki? Char diner Durga pujor pandeler pichhone bishal khorcha o grame ganje garib manusher daridrer hahakar aj o sei contradiction ke aro sposto kore tulchhe!
Unlike · Reply · 2 · 2 October at 09:55