MON KHEROR KHATA

MON KHEROR KHATA
Memories

বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৭

বাদল বাউলের একতারা
সলিল সরকার

বাদল সরকারের প্রথম পর্বের নাটক মূলত সরস কৌতুক। মাইথন অফিসারদের রিক্রিয়েশন ক্লাবে নিয়মিত নাটক হতো। বড় পিসিমা, সলিউশন এক্স, রাম শ্যাম যদু, বল্লভপুরের রূপকথা,  
বাংলা নাটকে সরস কৌতুকের এক নতুন মাত্রা আনল। এর আগে কমেডির নামে যা লেখা হচ্ছিল তা যেন শিথিল ভাঁড়ামো। এমন ঝরঝরে ভাষায় তরতর করে এগিয়ে যাওয়া ব্যাপারটা ছিল না বললেই চলে। এরপর লিখলেন “সারারাত্তির”। এই সবকটি নাটকই সেসময় বিপুল সাড়া ফেলেছিল। বাংলা নাটকে তখনো নতুন চমক আসার কথা ভাবেননি কেউই। রক্তকরবী-এর পরে যেমন নবান্ন সেইভাবেই এলো “এবং ইন্দ্রজিৎ”। বাংলা নাটক আধুনিক হয়ে উঠল। 
নাট্যের অ ম ল বি ম ল ক ম ল এবং সুধীন্দ্রনাথেরা পেল নতুন দিশা।  
সুধীন্দ্রনাথ সরকারকে বুঝতে গেলে বাংলার ছয়ের দশককে ও সাতের দশককে বুঝতে হবে।তবেই পাওয়া যাবে বাদল সরকারকে। পাওয়া যাবে বাংলা নাটকের নতুন দিশা। পাওয়া যাবে “এবং ইন্দ্রজিৎ” ও আরও কিছু। 
১৯৫৯ এর ৩১ আগস্ট এক নারকীয় তাণ্ডব চালানো হয়েছিল এই বাংলার মোকাম কোলকাতায়। মারা গিয়েছিল ৮১জন।১সেপ্টেম্বর পালিত হোল শহীদ দিবস। এই দশকে ছাত্র আন্দোলন এক অনন্য ভূমিকা নিতে এগিয়ে এলো। ভারত-চীন সীমান্ত সংঘর্ষ নিয়ে বাম রাজনীতি ‘কনফিউজড’ । সরকারি চাকুরেদের মাইনে বাড়ছে। অত্যাবশ্যক পণ্যের দাম বাড়ছে হু হু করে।এক পয়সা ট্রাম ভাড়া বাড়তেই ছাত্ররা ট্রাম বাস পুড়িয়ে আন্দোলন শুরু করে দিল। উত্তাল কলকাতা।উত্তাল বাংলা। বাংলা থিয়েটারে মুক্তির সন্ধান পাশ্চাত্য নাটকের অনুবাদ ও মঞ্চায়নে। “এবং ইন্দ্রজিৎ” সেই শিক্ষিত মধ্যবিত্ত যুবাদের দ্বিধার দলিল। কারণ তখন অমল বিমল কমল সুধীন্দ্রনাথ এরা বামপন্থী রাজনীতিতে কালের নিয়মে যুক্ত হয়ে পড়ছেন। বাদলবাবু লিখছেন, “হাসাবার ক্ষমতা চলে যাচ্ছে আমার। ... এতো রূপক এতো আড়াল সত্ত্বেও সত্যি মানুষগুলো বড় বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠছে।’’
প্রসেনিয়াম মঞ্চে বাদলবাবুর নাট্যকার হিসেবে তীব্র সাফল্য তৈরি হচ্ছেসারারাত্তির’, ‘এবং ইন্দ্রিজিৎ’, ‘বাকি ইতিহাস’, ‘প্রলাপ’, ‘ত্রিংশ শতাব্দী’, ‘পাগলা ঘোড়া মতো নাটকগুলির মধ্য দিয়ে।প্রবাদপ্রতিম শম্ভু মিত্র ও বহুরূপী বাদল সরকারকে নাট্যকার হিসেবে সম্মান জানাচ্ছে তার নাটক মঞ্চায়ন করে। বাদল সরকার “বাকি ইতিহাস” লিখছেন ৬৫ তে, ৬৬তে লিখছেন “প্রলাপ", একই সময়ে লিখছেন “ত্রিংশ শতাব্দী” ৬৭ তে লিখছেন “পাগলা ঘোড়া” ।তাপস সেনের আলো, খালেদ চৌধুরীর মঞ্চ, শক্তি সেনের রপ সজ্জা আর শম্ভু মিত্রের পরিচালনায় বাদল সরকারের নাটক পাচ্ছে নতুন মাত্রা। বাংলার আন্দোলনের মতোই সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ছে বাদল ধারা। 
তার ফলে ১৯৬৮ তে তিনি পাচ্ছেন সংগীত নাটক আকাদেমি সম্মান। 

এই পুরস্কার প্রাপ্তির এক বছর আগেই গ্রে তুলছেন নিজের নাট্য সংগঠন “শতাব্দী"। প্রসেনিয়ম মঞ্চেই চলছে প্রযোজনা। কিন্তু সে আর কতদিন? বাংলার মাঠ-পাথার-প্রান্তর ডাকছে আয় আয় আয়। এবং ইন্দ্রজিতের মতো তিনিও দোলাচলে। প্রসেনিয়মের পাশাপাশি অঙ্গন মঞ্চ। যখন খ্যাতির তুঙ্গে তখনি তো মায়া কাটানোর কাল। বাউল বাদল আলো অন্ধকারে ছটফট করতে করতে পেলেন অন্ধকার থেকে মুক্তির দিশা। বাদল বাউল নাট্যের একতারা নিয়ে বেরিয়ে এলেন অঙ্গনে।    

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন