আমাকে তুমি অশেষ
করোনি......
মা বলত মায়ের পেট থেকে
শিশু বেরোবার পর বিধাতা পুরুষ এসে শিশুকন্যা বা শিশুপুত্রের ললাটে বিধিলিপি লিখে
দেন।সেই ললাট লিখন নিয়েই সে চলে আমরণ। আমার ললাটে বিধাতা পুরুষ কী লিখেছিল মা তুমি
কি জানো?মা বলেছিল-“তুই আমার এলেবেলে,তুই আমার দুধুভাতি”।‘এলেবেলে’টা সত্যি কিন্তু
মায়ের দুধুভাতি হলেও দুধ আর ভাত কোনটাই আমি কোনকালেই পচ্ছন্দ করি না।তার চেয়েও বড়
কথা আমি আসার প্রায় পরে পরেই মায়ের পেটে পর পর দুটি মেয়ে এসেছিল যাদের জন্যে আমি
মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত।আসলে সেই ছোটবেলা থেকেই বিধাতা থেকে আশপাশের মানুষজন আমার
বিষয়ে যা ভেবেছে আর যা বলেছে হয়েছে তার বিপরীত।
আমি জন্মেছিলাম দাদুরবাড়ি
রাধাবল্লভপুরে।বাংলার ১৩২২,২৯ জ্যৈষ্ঠ সোমবার ১০.৪৫ মিনিটে ডাক্তার জ্যাঠা শ্রী
কালিপদ বাগচির হাতে।জন্মাবার পর আমার মাথায় চুল ছিল না তাই জ্যাঠাবাবু নাম
দিয়েছিলেন ‘ন্যাড়া’ অন্যরা ডাকত ‘নাড়ু’ বলে। ছোটপিসেমশায় ডাকতেন ‘নেড়ু’,সেজকাকা
ডাকত ‘লেড়ু’।ছোটোরা কেউ কেউ ‘নেরুদা’ বলেও ডাকত।তারা কোন দিন জানতেও পারেনি পাবলো
নেরুদার কথা। সেজকাকিমা নাম দিলেন ‘বাঁশরি’।কেন কে জানে!বাবা নাম রাখল ‘সলিল
কান্তি’। তাই বা কেন?তাও জানি না।বহুদিন না জেনে না বুঝে ওই ‘কান্তি’ বহন
করেছি।পরে কান্তি ক্লান্তিকর মনে হওয়ায় কান্তি বিলুপ্ত করে শুধুই সলিল
সরকার।গণৎকার কোষ্ঠী তৈরির সময় কী একটা জটিল নামের সংগে দেবশর্ম্মণ জুড়ে
দিয়েছিল।জাতকের রাশি নির্ধারণ হয়েছিল ‘মীণ’ আর লগ্ন ‘মকর’।এসব পড়ে যদি কারও মনে হয়
আমি এসবে বেশ বিশ্বাসী তাহলে কিঞ্চিৎ ভ্রম অনিবার্য।তবু বলছি এই কারণে এইসবই
ইতিহাসের দিনলিপি।
যে জ্যোতিষই আমাকে দেখেন
তিনি তৎক্ষণাৎ আমার হাতটা টেনে নিয়ে আমার আঙুলের বিন্যাস দেখে বিস্মিত হন।আমার
হাতের কাটাকুটি থেকে তারা নিশ্চিতভাবে বলে দেন আমার গাড়ি-বাড়ি-ব্যাংক ব্যালান্স
যথেষ্ট।যদিও তার একটাও নেই।টাকাকড়ি তো দূর একটা ফুটো কড়িও নেই।আমার নাকি কোনওদিন
অভাব হবে না।চিরকাল ভাব আড়ির খেলাই দেখলাম হয়ত সেটাই স্বভাব বলে।
অন্নপ্রাসণের কালে আমি আর
আমার খুড়তুতো ভাই একসাথে বসেছিলাম।ও ধরেছিল কলম আর আমি ধরেছিলাম ধন আর ধান।হায় সেই
আমার প্রথম আর সেই আমার শেষ ধরা।এখনও কলম চালিয়ে কলমের জোরেই করে কম্মে খাচ্ছি।
আগেই লিখেছি গ্রামের বাড়িতে
আমাদের জন্মদিন পালন হোতো না হোতো জন্মতিথি। আর সাহেবদের মতো মাঝরাতে কেক কাটা
হোতো না।হোতো পায়েস।পাত পেড়ে ভোজ হোতো।আর পাঁচটা দিনের থেকে খুব একটা পৃথক ছিল না।শুধু
ওইদিনটায় কেউ কোনও দুষ্টুমি করলেও মার খেত না।এমনকি বকুনিও নয়।সেদিন পড়াশোনা করার
জন্যে কেউ তাড়া লাগাত না।পড়ার বইয়ের আড়ালে নয় প্রকাশ্যে গল্পের বই পড়লেও কেউ কিছু
বলত না।এ যেন ‘জন্মতিথির ভারী মজা কিল চড় নাই’।তবে দুপুরের খাওয়ারটা খেতে হোতো
পাঁজি পুঁথি মেনে।প্রথম পাতে থাকত ঘি।পাতে পড়ত মাছের মুড়ো।শেষে থাকত পায়েস।আমার
শৈশবের এই মধুর স্মৃতি আমি কাজে লাগিয়েছিলাম রাজা সেনের চলচ্চিত্র “চক্রব্যুহ” তে
চিত্রনাট্য লেখার কালে।এক বক্সার যে পেটের তাগিদে মস্তান হয়ে যায় সেই জন্মদিনে
মায়ের বেড়ে দেওয়া পঞ্চব্যঞ্জন খেতে বসেও একটি মেয়েকে যৌনপল্লী থেকে উদ্ধার করতে
পাত ছেড়ে উঠে যায় আর মেয়েটিকে বাঁচিয়ে নিজে মারা যায়।এটা দৃশ্যায়িত করার সময় রাজার
সহকারীদের খুব জ্বালিয়ে ছিলাম।খাওয়ার পাতে যাতে সব থাকে সেদিকে কড়া নজর রেখেছিলাম।
তার ফলটাও পাওয়া গিয়েছিল।প্রোট্যাগনিস্টের জন্মদিনেই মৃত্যুর মধ্য দিয়ে নতুন জন্ম
মানুষকে নাড়া দিয়েছিল।এভাবে আমার জন্মের সংগেও জড়িয়ে গেছে এক মৃত্যু।সে আমার বন্ধু
ছিল কি না জানি না কিন্তু সে যে আমার নাট্যজন ছিল সে যে আমার মিত্র ছিল এ কথা অস্বীকার
করি কী করে?সে ছিল অশেষ......।
১৩ জুন আমার জন্মদিনের সংগে জড়িয়ে আছে 'ডব্লিউ বি ইয়েটস' এর জন্মদিন।১৩জুন ২০০৯ আমার জন্মদিনের সংগে হারিয়ে গেছে আমার প্রিয় নাট্যজন অশেষ সেন গুপ্ত।
১৩ জুন আমার জন্মদিনের সংগে জড়িয়ে আছে 'ডব্লিউ বি ইয়েটস' এর জন্মদিন।১৩জুন ২০০৯ আমার জন্মদিনের সংগে হারিয়ে গেছে আমার প্রিয় নাট্যজন অশেষ সেন গুপ্ত।
খুবই ভালো লিখেছো সলিল দা।অশেষ দা কে আবার এই সকালে মনে করিয়ে দিলে।আমার সব নাটক নিয়ে ও আমার অস্থির যাপনে যে লোকটা সব সময় আমার পাশে থাকত - সে এখন নেই।খুব একা হয়ে গেছি এখন।আবারো তোমাকে ধন্যবাদ
উত্তরমুছুনSamir Mitra Darun story
উত্তরমুছুনUnlike · Reply · 1 · 14 June at 22:16
Piyali Palit
Piyali Palit জটিল রাশিচক্র :)
Unlike · Reply · 1 · 14 June at 22:23
Salil Sarkar
Salil Sarkar জটিল রাশিচক্র?নাকি রাশি রশি জটিল চক্র......?
Like · Reply · 14 June at 22:48
Piyali Palit
Piyali Palit Ha ha ha
Like · Reply · 15 June at 00:46
Salil Sarkar
Write a reply...
Choose file
Bibhas Saha
Bibhas Saha Naru sir(janina anoder nam diye dakhlam))....khub sundor hoye6a...
Like · Reply · 15 June at 00:14
Kaushik Bhattachariya
Kaushik Bhattachariya
Like · Reply · 15 June at 01:50
Sarmistha Bandyopadhyay
Sarmistha Bandyopadhyay চমৎকার!!
Like · Reply · 15 June at 04:43
Ramita Sengupta
Ramita Sengupta কত যে ছোট ছোট কথার আর মুহূর্ত্তের ঢেউ জাগিয়ে দিলে ! রঞ্জনদা তোমায় ন্যাড়া বলতেন; পেছনে লাগতে কেউ তো কম যেত না ! একবার সারারাত জেগে তোমরা বিভিন্ন প্রকারের মানুষজনকে বিচিত্র সব কাল্পনিক ভূমিকায় দাঁড় করিয়ে কতরকম বিচিত্র ফ্যাঁসফ্যাঁস খ্যাশখ্যাশ শব্দে যে হেসেছিলে !
সেই দ্বৈত হাসির হররা এখনও শোনা যায় কান পাতলেই ! ইথারে সবই অশেষ ।
Like · Reply · 15 June at 06:46
Soven Ganguly
Soven Ganguly খুবই ভালো লিখেছো সলিল দা।অশেষ দা কে আবার এই সকালে মনে করিয়ে দিলে।আমার সব নাটক নিয়ে ও আমার অস্থির যাপনে যে লোকটা সব সময় আমার পাশে থাকত - সে এখন নেই।খুব একা হয়ে গেছি এখন।আবারো তোমাকে ধন্যবাদ
Like · Reply · 15 June at 07:55
Binita Deb
Binita Deb বড় বেশি করে মনে করালে অশেষদাকে,ভারী মন ধেয়ে গেলো বছর ত্রিশের পারে..... ..কলকাতার পথে পথে হেঁটে চলা যুবক যুবতীর ভিড়ে হাল্কা চালে উড়ে চলা অশেষদা.....
Like · Reply · 15 June at 10:47 · Edited