MON KHEROR KHATA

MON KHEROR KHATA
Memories

মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

হেমন্তের ডাক পিওন ফ্লিপকার্ট,স্ন্যাপডিল,আমাজন ডট কম
(মন খারাপের খাতা)
সলিল সরকার
আমাকে বসিয়ে রেখে ওরা বেরিয়ে গেল।হলদিয়া যাওয়ার বাস ধরবে বলে।ওরা মানে তিথিপর্ণা আর অপর্ণা।এই ঈদের ছুটিতেও নিস্তার নেই।কাল সকাল থেকেই কলেজের ক্লাস।পড়াশোনার চাপ।ছুটির আনন্দ কাকে বলে ওরা জানে না।ছোটাছুটির বিড়ম্বনা ওরা ভালোই রপ্ত করে ফেলেছে।আর আমাকে বাসায় বসিয়ে রেখে গেছে স্ন্যাপডিল-এ কিছু একটা আসবে বলে।আমাকে এখন অপেক্ষা করতে হবে কখন সে আসবে।তার পিঠে থাকবে হ্যাভারস্যাক,হাতে থাকবে স্মার্টফোন,মাথায় থাকবে হেলমেট।আর আমার হাতে থাকবে ঠিকঠাক খুচরো টাকা আর পয়সা।নেবে আর দেবে তারপর সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাবে।
আমার এই অপেক্ষা করাটা খারাপ লাগে না।ছোটোবেলা থেকে কতোদিন অপেক্ষা করেছি কতোকিছুর জন্যে।কতো প্রতীক্ষায় থেকেছি।কখনও আশ মিটেছে।কখনও হতাশা।আমাদের ছিল ডাকঘর পোস্টঅফিস বা পোস্টাপিস।ছিল ডাকপিওন বা পোস্টম্যান।সে আসত সাইকেলে চড়ে।এক কাঁধে থাকত খাঁকি ডাকব্যাগ আর হাতে থাকত গোছা গোছা চিঠি।দূর থেকে সাইকেলের ঘন্টি শুনলেই বুঝতে পারতাম ডাকপিওন আসছে।ঘন্টি তো সবাই বাজায়।তার পরেও কী করে বুঝতে পারতাম কোনটা কার সাইকেলের ঘন্টি?এটা বোঝানো মুশকিল!যখন ল্যান্ডফোনে কলার ছিল না।কালো টেলিফোনের ক্রিং ক্রিং সাউন্ড শুনে কী করে বুঝতাম এটা ভালো খবরের ফোন কল না কি খারাপ খবরের কি খারাপ লোকের রং নাম্বার!
ভোরের টেলিফোন আর মাঝরাতের টেলিফোন মানেই ধরে নিতে হবে খুব খারাপ কোনও খবর কিম্বা বেশ ভালো কোনও সংবাদ!একটানা ক্রিং ক্রিং সাউন্ড মানেই ট্রাংককল।তারও আগে মহিলা অপারেটর ফোন করে বলতেন “লাইনটা ধরে থাকুন। ট্রাংক কল আছে!”দুরুদুরু বুকে অপেক্ষা করতে হোত।খারাপ খবর হোলে অপারেটরের কন্ঠস্বর শুনেই কী করে যে বুঝতাম!ভালো খবর হোলে মহিলা কী মিহি সুরে বলতেন-“ফোনটা ধরে থাকুন।ছাড়বেন না!”কখনও কখনও বার বার কেটে যেত লাইন।আবার ফিরে ফিরে আসত।নানা সময়ের মহিলা অপারেটরের নানান ব্যবহার সে এক অপূর্ব কল্পনার বিলাস।এই নিয়ে এক কালে রেডিয়োয় নাটকও লেখা হয়েছে।কিন্তু ডাকপিওন তো পালটে পালটে যেত না।মহিলাও হোত না।তবু তার অপেক্ষায় থাকতাম
কেন না তার হাতের খামে আর থলির ভিতরে থাকত হাজার রহস্য।পোস্টকার্ড, ইনল্যান্ড,এনভেলপ,বুক পোস্ট,বিদেশের চিঠি আর দেশি-বিদেশি জার্নাল।আর বড়োদের থাকত মানি অর্ডার।ডাকপিওন টাকাটা দিয়ে উত্তর লিখিয়ে নিয়ে ঘন্টি বাজিয়ে চলে যেত।শুধু কোনও পার্সেল এলে কি রেজিস্ট্রি চিঠি এলে খোলা অব্দি অপেক্ষা করত বখশিসের আশায়।নিদেন পক্ষে জল-মিষ্টি।কিছু না হোক জল-বাতাসা।কী পরম তৃপ্তিতে সেই জল পান করে,গাছের ছায়ায় কি বৈঠকখানার দাওয়ায় সামান্য জিরিয়ে আবার সাইকেল চালিয়ে হারিয়ে যেত মোরামের রাস্তায়।পাশের খবর এলে কি চাকরির জয়েনিং লেটার এলে বাড়ির লোকের সংগে ডাকপিওনও খুসিতে আপ্লুত হোত।আর শোক সংবাদ এলে বিশদ জেনে নিয়ে ফিরে যেত নিজের ডিউটিতে।তখন অনেক বেশি অবকাশ আর অবসর ছিল?না কি আন্তরিকতা ছিল?আত্মীয়তা বোধটা তখনও ক্রিয়াশীল ছিল?
এখন স্ন্যাপডিল কি ফ্লিপকার্ট-এর যুবক(কোনও যুবতীকে কখনও দেখিনি করিনা কাপুরের মতো হেলমেট মাথায় ডোর বেল বাজাতে)ঘামের গন্ধ ঢাকতে চড়া সেন্ট মেখে আসে।স্মার্টফোন এগিয়ে দেয় সই করার জন্যে।টাকাটা গুনে গুনে নিয়ে এক টাকা ফেরত দেবার হোলে সেটাও ফেরত দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নির্বিকার চিত্তে নেমে যায় পরের কোনও বাড়ির ডোরবেল বাজাবে বলে।
লেখাটা লিখতে লিখতেই ডোরবেল বাজল।দরজা খুলতেই স্ন্যাপডিল-এর ঘেমো যুবক ঠিকানা নিশ্চিত হয়ে টাকাটা নিয়ে হাতে ধরিয়ে দিল ছোট্ট একটা বাক্স।সেটা খুলতেই দেখলাম তার ভেতরে আছে এক সেন্টিমিটার মাপের একটা “স্মৃতি আধার”(মেমরি কার্ড)যার ধারণ ক্ষমতা ১৬গিগা বাইট।
হায়!স্মৃতি কী সংকুচিত হোয়ে এসেছে!



1 টি মন্তব্য:

  1. Daliya Charulota Karmakar Daruun bolechen dada....swriti ra aj sotyi sonkuchito....
    Unlike · Reply · 1 · 6 hrs
    Shalini Maji
    Shalini Maji Kaku sheshe tomay ekta 16 giga byte er "smriti r adhar"er jonno fele rekhe chole glo...eta thik hoy ni😊😊😊..kintu tar poriborte lekha ta khub sundor...
    Unlike · Reply · 1 · 5 hrs
    Salil Sarkar
    Salil Sarkar তুই চিন্তা কর শালিনী......।তোদের কালে Memory কতো ছোটো হয়ে গেছে!লেখাটা পড়ার জন্য সময় ব্যয় করায় এবং মন্তব্য লেখায় খুসি হলাম।
    Like · Reply · 1 · 3 hrs
    Shalini Maji
    Shalini Maji Amader kale smriti choto hoy ni..borong amra aro Beshi kore smriti gulo k ankre dhorte chai...😊😊😊
    Like · Reply · 5 mins
    Salil Sarkar
    Salil Sarkar বাহ বেশ......।ভালো লাগল।
    Like · Reply · 1 · 1 min
    Salil Sarkar

    Write a reply...

    Choose file
    Samir Mitra
    Samir Mitra Darun
    Like · Reply · 3 hrs

    উত্তরমুছুন