MON KHEROR KHATA

MON KHEROR KHATA
Memories

মঙ্গলবার, ১৫ মে, ২০১৮

মন খেরোর খাতা
সলিল সরকার
জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে যাত্রাপালার চল অনেকদিনের।রবি ঠাকুরের কালে গোপাল উড়ের যাত্রা কবিকে গান লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিল।
বিদ‍্যাসুন্দর পালার সেই গান "ওই দেখা যায় বাড়ি আমার চারদিকে মালঞ্চ বেড়া।ভ্রমরেতে গুনগুন্ করে।কোকিলেতে দিচ্ছে সাড়া।" হয়ে গেল "ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে।" কিংবা "দুজনে দেখা হোলো মধুযামিণীরে।"
সেই ঠাকুরবাড়ি থেকে যাত্রা নির্বাসিত হয়েছিল।আমরা ছাত্রাবস্থায় আবার ফিরিয়ে এনেছিলাম।মহর্ষি ভবনের উঠোন জুড়ে পরপর কয়েকবার গণেশবাবুর পরিচালনায় আমরা করেছিলাম "তরণীসেন বধ" পালা। উঠোনের মাঝখানে বসেছিল আসর।চারকোনায় রাখা হয়েছিল হ‍্যাজাকের বাতি পুরানো মেজাজ ফিরিয়ে আনার জন‍্যে।পোশাক অভিনয় মঞ্চ আলো রূপসজ্জা সংগীত সবেতেই পুরানো আমেজ আনা হয়েছিল।
যাত্রার শুরুতে কনসার্ট।তার ও আগে অধিকারী সেজে নাটকের পাণ্ডুলিপি হাতে বসতাম আসরের একপাশে।একটা পেটানো ঘণ্টায় জানাতাম সময়।থার্ড বেলে শুরু হতো পিলুরাগে বৃন্দাবন।সেখানে ক্ল‍্যারিওনেট, বাঁশি, ঢোল,খোল,হারমোনিয়াম, বেহালা,ঝাঁঝ,সব থাকত।
অভিনয়ে দেবেশ রায়চৌধুরী আমি কখনও অধিকারী আবার অন‍্য চরিত্রে।এ বাদে অরুণীতা মজুমদার(প্রখ্যাত গায়ক নায়ক রবীন মজুমদারের ছোট মেয়ে),অলোক চন্দ্র, অপরূপ গাঙ্গুলি, দেবাশিস রায়চৌধুরী, সমীর, প্রতীক আরও অনেকে।
বিশ্বদেব দত্ত গণেশবাবুর সহকারী ছিল।বিশ্ব আজ আর নেই।
প্রতিটি শোয়েই হাউস থুড়ি উঠোন ফুল থাকত। ঠাকুর বাড়ির উঠোনের চারপাশ ছাড়াও দোতলার বারান্দায় বসে দাঁড়িয়ে দেখতেন।
কলকাতার অনেক নাট‍্যজন এই প্রযোজনা এসে দেখেছিলেন।আর রাধা স্টুডিয়োতে আসর বসিয়ে কাজ করেছিলাম আমরা।সে এক যুগান্তকারী প্রযোজনা।যারা দেখেছেন তারাই বলেছেন।
পলাশ আমার সহপাঠী বন্ধু এই ছবি তুলে ইতিহাস ধরে রেখেছিল সেলুলয়েডের ক‍্যানভাসে।না হলে স্মৃতি ছাড়া সব হারিয়ে যেত।হয়তো কলকাতার দূরদর্শনে আছে সাদা কালোর চলমান ছবি হয়ে।একবার ফিরে দেখলে হোতো।তখন বিভাস চক্রবর্তী ছিলেন প্রযোজক।সুব্রত মুখোপাধ্যায় ছিলেন।আর ছিলেন ধ্রুব মিত্র।তরুণ রায়,কুমার রায় খুব উৎসাহ জুগিয়ে ছিলেন।
এটা ১৯৮১/৮২ র কথা।এই কথাগুলো লিখলাম তখনকার মান বোঝাতে ও যাদের সান্নিধ্য পেয়েছি সেই ঋণ স্বীকৃতিতে।আজকের মতো ঢাক পেটাতে ও মিথ‍্যায় মজতে নয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন