ত্বিষাম্পতির জীবন যাপন
সলিল সরকার
৯.
সূচিভেদ্য অন্ধকার।সূচিপতন নৈঃশব্দ
ছেলেগুলো কী করতে চাইছে? একজন ছাপোষা মানুষ মন্দার বাজারে চাকরি খুইয়ে পেট চালাতে ঠোঙা তৈরি না করে বই বাঁধাইয়ের কাজ ধরেছে।সেই লোকটাই ছেলে বাসুর কাছে শুনে পাড়ার নেতার সংগে দেখা করে মিথ্যে স্বাধীনতা সংগ্রামীর তাম্রপত্র জোগাড় করে বসে।
- বাঁচার জন্যে এইটুকু মিথ্যে বললে পাপ নেই।
কিন্তু এই মিথ্যের অনেক দায়।তাকে তাই মাসোহারা পাবার জন্যে সভা সমিতিতে গিয়ে ভাষণ দিতে হবে।ত্বিষাম্পতি তাই সংগ্রামের ইতিহাস পড়তে শুরু করে।যে পড়াই তার কাল হয়ে ওঠে।সে সত্যের আলোতে আলোকিত হতে থাকে।সে বুঝতে পারে স্বাধীনতা সহজে মধ্যরাতের চুক্তিতে আসেনি যদি সত্যিই এসে থাকে তা এসেছে অনেক প্রাণের বিনিময়ে।এখানেই বাঁধে মুশকিল।মিথ্যে সাজার সত্যির ভয়।বিরতি আসে ভুষোকালির ভাঙাহাঁড়ি মুখে বঙ্কু পাগলের নীরব হাসি আর সরব প্রকাশে।
পর্দা পড়ল।প্রেক্ষাগৃহে আলো জ্বলল।কোনও শব্দ নেই।কেউ উঠেও যাচ্ছেন না।দীনেনদা ভিতরে এসে বললেন ঠিক আছে।কেউ ঘাবড়িও না।পরের হাফ ঠিক হওয়া চাই।মঞ্চের তেমন কিছু পরিবর্তন নেই।শুধু গোটানো বিছানা পরিপাটি করে পাতা আর বাঁধাইয়ের অপ্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তক্তাপোষের তলায়।আপস্টেজের আলনায় জামা কাপড় পাট করে রাখা।পর্দা খুলল।এবার পরতে পরতে নেমে এলো বিপর্যয়।মিথ্যা থেকে সত্য প্রকাশের বিপর্যয়।ত্বিষাম্পতি ফানুসটা ফাটিয়ে ফেলছে।ঘোষঠাকুমা মরা নাতির জন্যে হাহাকার করে-কেউ কী আর বাঁচবে?
"একটা ইংরেজকে মেরেছে বলে যদি আমার ছেলেকে মারেন আমার ছেলেকে মেরেছেন বলে আমি আবার একটা ইংরেজ মারব।হাতে হাঁসুলি নেই,ইংরেজি বন্দুক নেই, এই আঙুল দিয়েই শেষ করব!" ত্বিষাম্পতি নিজেকে আগুনে পুড়িয়ে শুদ্ধ করে।তাম্রপত্র ফেরৎ দিয়ে আসে সুশীল বাবুকে।আবার তক্তাপোষের তলা থেকে বেরিয়ে আসে কাগজ,কাঁচি,সূচ,সুতো,আঁঠা,বই,খাতা।
"মরা মরা বলতে বলতে বেরিয়ে আসে রাম।সাজা রিঙ্কু ভালো করে সাজা।"
সবাই স্থাণুবৎ।শুধু রিঙ্কু আর ত্বিষাম্পতি স্থিরতায় অস্থির।নাটক শেষ।সবাই চুপ।যেখানে এতোক্ষণ অন্ধকার ছিল সেখানে আলো জ্বলে উঠল।হাততালি পড়ল কী?আমরা কেউ শুনতে পাইনি।শ্রবণে বধির তখন।নাট্যকার মঞ্চের পিছনের দেওয়ালে স্থির।ছুতোর মিস্ত্রি জড়িয়ে ধরল তাকে।নাট্যকার ছুটে এলো ত্বিষাম্পতির কাছে।আলিঙ্গন।ছুটে এলো সব কলাকুশলী।অনেক প্রশ্নের উত্তর।অনেক সংশয়ের আপাত অবসান।দীর্ঘ লড়াইয়ের পর জয়।উপরে মঞ্চে অয়দিপাউস।নিচে ত্বিষাম্পতি।
সলিল সরকার
৯.
সূচিভেদ্য অন্ধকার।সূচিপতন নৈঃশব্দ
ছেলেগুলো কী করতে চাইছে? একজন ছাপোষা মানুষ মন্দার বাজারে চাকরি খুইয়ে পেট চালাতে ঠোঙা তৈরি না করে বই বাঁধাইয়ের কাজ ধরেছে।সেই লোকটাই ছেলে বাসুর কাছে শুনে পাড়ার নেতার সংগে দেখা করে মিথ্যে স্বাধীনতা সংগ্রামীর তাম্রপত্র জোগাড় করে বসে।
- বাঁচার জন্যে এইটুকু মিথ্যে বললে পাপ নেই।
কিন্তু এই মিথ্যের অনেক দায়।তাকে তাই মাসোহারা পাবার জন্যে সভা সমিতিতে গিয়ে ভাষণ দিতে হবে।ত্বিষাম্পতি তাই সংগ্রামের ইতিহাস পড়তে শুরু করে।যে পড়াই তার কাল হয়ে ওঠে।সে সত্যের আলোতে আলোকিত হতে থাকে।সে বুঝতে পারে স্বাধীনতা সহজে মধ্যরাতের চুক্তিতে আসেনি যদি সত্যিই এসে থাকে তা এসেছে অনেক প্রাণের বিনিময়ে।এখানেই বাঁধে মুশকিল।মিথ্যে সাজার সত্যির ভয়।বিরতি আসে ভুষোকালির ভাঙাহাঁড়ি মুখে বঙ্কু পাগলের নীরব হাসি আর সরব প্রকাশে।
পর্দা পড়ল।প্রেক্ষাগৃহে আলো জ্বলল।কোনও শব্দ নেই।কেউ উঠেও যাচ্ছেন না।দীনেনদা ভিতরে এসে বললেন ঠিক আছে।কেউ ঘাবড়িও না।পরের হাফ ঠিক হওয়া চাই।মঞ্চের তেমন কিছু পরিবর্তন নেই।শুধু গোটানো বিছানা পরিপাটি করে পাতা আর বাঁধাইয়ের অপ্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তক্তাপোষের তলায়।আপস্টেজের আলনায় জামা কাপড় পাট করে রাখা।পর্দা খুলল।এবার পরতে পরতে নেমে এলো বিপর্যয়।মিথ্যা থেকে সত্য প্রকাশের বিপর্যয়।ত্বিষাম্পতি ফানুসটা ফাটিয়ে ফেলছে।ঘোষঠাকুমা মরা নাতির জন্যে হাহাকার করে-কেউ কী আর বাঁচবে?
"একটা ইংরেজকে মেরেছে বলে যদি আমার ছেলেকে মারেন আমার ছেলেকে মেরেছেন বলে আমি আবার একটা ইংরেজ মারব।হাতে হাঁসুলি নেই,ইংরেজি বন্দুক নেই, এই আঙুল দিয়েই শেষ করব!" ত্বিষাম্পতি নিজেকে আগুনে পুড়িয়ে শুদ্ধ করে।তাম্রপত্র ফেরৎ দিয়ে আসে সুশীল বাবুকে।আবার তক্তাপোষের তলা থেকে বেরিয়ে আসে কাগজ,কাঁচি,সূচ,সুতো,আঁঠা,বই,খাতা।
"মরা মরা বলতে বলতে বেরিয়ে আসে রাম।সাজা রিঙ্কু ভালো করে সাজা।"
সবাই স্থাণুবৎ।শুধু রিঙ্কু আর ত্বিষাম্পতি স্থিরতায় অস্থির।নাটক শেষ।সবাই চুপ।যেখানে এতোক্ষণ অন্ধকার ছিল সেখানে আলো জ্বলে উঠল।হাততালি পড়ল কী?আমরা কেউ শুনতে পাইনি।শ্রবণে বধির তখন।নাট্যকার মঞ্চের পিছনের দেওয়ালে স্থির।ছুতোর মিস্ত্রি জড়িয়ে ধরল তাকে।নাট্যকার ছুটে এলো ত্বিষাম্পতির কাছে।আলিঙ্গন।ছুটে এলো সব কলাকুশলী।অনেক প্রশ্নের উত্তর।অনেক সংশয়ের আপাত অবসান।দীর্ঘ লড়াইয়ের পর জয়।উপরে মঞ্চে অয়দিপাউস।নিচে ত্বিষাম্পতি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন