ত্বিষাম্পতির জীবন যাপন
সলিল সরকার
১.
সকাল সাতটায় শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে হরিদাস মোদকের দোকানের সামনে থেকে বাস ছাড়বে।সবাই ওখানেই উঠবে শুধু আমরা কজন ভবানীপুর খালসা স্কুলের সামনে থেকে সেটের জিনিস নেব।তার জন্যে চন্দনদা (সেনগুপ্ত)মল রোড থেকে, দেবুদা(দেবাশিস মজুমদার)বাঙুর থেকে, প্রবুদ্ধ(মিত্র)বাগবাজার থেকে আর আমি পাইকপাড়া থেকে ছুটলাম ভবানীপুর।গাঁজাপার্ক থেকে তিনচাকার টেম্পো ভাড়া করে জগুবাবুর বাজার থেকে ফুলের মালা আর অমৃতি কিনে ভবানীপুর থেকে সেটের মাল তুলে ছুটলাম শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়।বাসের মাথায় মাল তুলে ফুটপাতের কর্পোরেশনের জলে হাত মুখ ধুয়ে যখন একটু জিরোচ্ছি শিবপুর থেকে এসে পড়ল গৌতম, গৌরী(চৌধুরী), টুপুর(ঘোষ)।মাধব দাস লেন থেকে অপর্ণা(ভড়),বিবেকানন্দ রোড থেকে বাসুদা।আকাদেমি থেকে আলোর মাল তুলে চলে এসেছে ঘোষদা।শক্তি(সেন)দা এসেছেন গড়িয়া থেকে। বাকিরাও চলে এসেছে ঠিক ঠিক সময়ে শুধু অমিত(মিত্র)দা শ্রীপতিদা (দাস) আর তার এসিস্ট্যান্ট ভাই ফেলুকে নিয়ে হাপাতে হাঁফাতে পৌঁছেই ঘাড়ের থেকে রুমালটা টেনে একবার ঝেড়ে আবার পাট পাট করে ভাঁজ করে ঘাড়ে চালান করে দিল।বাসে উঠেই সবাইয়ের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হোলো একটা করে কলা,পাঁউরুটি, সেদ্ধ ডিম আর হরিদাস মোদকের সন্দেশ।মেয়েদের মধ্যে কারো খেতে খেতে কুসুমের এক টুকরো পড়ে গেল বাসের মেঝেতে।আমাদের মধ্যে একজন খুব ধীর পায়ে গিয়ে সেটা কুড়িয়ে মুখে চালান করে দিল।সে আর কেউ নয় দ্বিজেনদা, দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায় "অমিতাক্ষর" নাটকের ত্বিষাম্পতি।সবাই হাঁ হাঁ করে উঠল।বাস ছুটল দুর্গাপুর।
সলিল সরকার
১.
সকাল সাতটায় শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে হরিদাস মোদকের দোকানের সামনে থেকে বাস ছাড়বে।সবাই ওখানেই উঠবে শুধু আমরা কজন ভবানীপুর খালসা স্কুলের সামনে থেকে সেটের জিনিস নেব।তার জন্যে চন্দনদা (সেনগুপ্ত)মল রোড থেকে, দেবুদা(দেবাশিস মজুমদার)বাঙুর থেকে, প্রবুদ্ধ(মিত্র)বাগবাজার থেকে আর আমি পাইকপাড়া থেকে ছুটলাম ভবানীপুর।গাঁজাপার্ক থেকে তিনচাকার টেম্পো ভাড়া করে জগুবাবুর বাজার থেকে ফুলের মালা আর অমৃতি কিনে ভবানীপুর থেকে সেটের মাল তুলে ছুটলাম শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়।বাসের মাথায় মাল তুলে ফুটপাতের কর্পোরেশনের জলে হাত মুখ ধুয়ে যখন একটু জিরোচ্ছি শিবপুর থেকে এসে পড়ল গৌতম, গৌরী(চৌধুরী), টুপুর(ঘোষ)।মাধব দাস লেন থেকে অপর্ণা(ভড়),বিবেকানন্দ রোড থেকে বাসুদা।আকাদেমি থেকে আলোর মাল তুলে চলে এসেছে ঘোষদা।শক্তি(সেন)দা এসেছেন গড়িয়া থেকে। বাকিরাও চলে এসেছে ঠিক ঠিক সময়ে শুধু অমিত(মিত্র)দা শ্রীপতিদা (দাস) আর তার এসিস্ট্যান্ট ভাই ফেলুকে নিয়ে হাপাতে হাঁফাতে পৌঁছেই ঘাড়ের থেকে রুমালটা টেনে একবার ঝেড়ে আবার পাট পাট করে ভাঁজ করে ঘাড়ে চালান করে দিল।বাসে উঠেই সবাইয়ের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হোলো একটা করে কলা,পাঁউরুটি, সেদ্ধ ডিম আর হরিদাস মোদকের সন্দেশ।মেয়েদের মধ্যে কারো খেতে খেতে কুসুমের এক টুকরো পড়ে গেল বাসের মেঝেতে।আমাদের মধ্যে একজন খুব ধীর পায়ে গিয়ে সেটা কুড়িয়ে মুখে চালান করে দিল।সে আর কেউ নয় দ্বিজেনদা, দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায় "অমিতাক্ষর" নাটকের ত্বিষাম্পতি।সবাই হাঁ হাঁ করে উঠল।বাস ছুটল দুর্গাপুর।
Prabuddha Mitra পর্দা নেমে আসছে। মঞ্চে তখন চলছে ত্বিষাম্পতির সংলাপ , " নিয়ে আয় রিঙ্কু, আঠার শিশিটা নিয়ে আয়, ..."।ত্বিষাম তখন নিজেকে ফিরে পেয়েছে।'মরা' 'মরা' বলতে বলতে বেরিয়ে এসেছে 'রাম'।সে তখন মেকি খোলস ছেড়ে বেরিয়ে হয়ে উঠেছে প্রকৃত সংগ্রামী।জীবনের যুদ্ধ মিলেমিশে গেছে দেশের স্বাধীনতার আসল সংগ্রামে।যা সাতচল্লিশের আগেও ছিলো।এখনো আছে।পর্দা নামছে।ত্বিষাম্পতির জীবন বৃত্তান্তে দর্শকরা প্রবল একাত্ম হয়ে সমবেত করতালি দিচ্ছেন।পর্দা নামলো।কলামন্দির বেসমেন্টে( কলাকুঞ্জ ) শেষ হলো 'অমিতাক্ষর' এর প্রথম শো।হলের করতালির ওম্ উইংসের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আমাদের রোমকুপকে উজ্জীবিত করছে তখন।বুঝতে পারলাম কয়েক মাসের কঠোর শ্রম সাফল্য পেয়েছে।
উত্তরমুছুননাটকের মঞ্চ সকলের জায়গা নয়।আমারও ছিলোনা। কিন্তু দলে এসেছিলাম আমি বা গৌতম ( চৌধুরি ) অন্য টানে।আমাদের ছিলো কলম চর্চার বদভ্যেস।নাট্যকার দেবাশিস আমাদের বন্ধু ছিলো "অভিমান" সাহিত্য পত্রিকার কর্মকান্ড পর্ব জুড়ে। থিয়েটারের আগে নাটক।সেই নাটক আদতে সাহিত্যের অন্যতম শাখা।কাব্য চর্চার পুরো ফায়দাটা মস্তানের মতো নাটক লেখায় নিয়ে আসতে পেরেছিলো দেবাশিস।তাই 'অমিতাক্ষর' হয়ে উঠতে পেরেছিলো বাংলা নাট্য সাহিত্যের সম্পদ।যা আজ যাদবপুরে বাংলা স্নাতকোত্তরের সিলেবাস ভুক্ত।হ্যাঁ, আমি, গৌতম বা অল্প কদিন হলেও কবি প্রসূন (বন্দ্যোপাধ্যায়) এই দলে যুক্ত হই নাট্যভাবনায় অংশ নিতে।কফিহাউসের টেবিলে 'অভিমান' পত্রিকার আড্ডা থেকেই থিয়েটারের টেক্সট নিয়ে বহু উথাল পাথাল আলোচনায় দেখতে পেয়েছিলাম মৌলিক নাটক রচনায় দেবাশিসের উদ্যোগ।
'অমিতাক্ষর' নাটকের কাব্যভাষা এই প্রথম শো এর পর কোলকাতার কবি লেখক কূলের আলোচনায় ঢুকে পড়ে।আর এই কাব্য সফল ভাবে মঞ্চে প্রতিফলিত হয় অভিনয়ের মাধ্যমে।ত্বিষাম্পতির নেতৃত্বে নাটকের সবাক ও নির্বাক সব চরিত্রের অভিনয় এক অদ্ভুত আন্ডারটোনে একসুত্রে বাঁধা পড়েছিলো। এগুলো এক সামান্য সংযোজন ত্বিষাম্পতি'র জীবন গাথায়।
LikeShow More Reactions · Reply · 3 · 16 October at 23:58 · Edited
Manage
Dilip Banerjee
Dilip Banerjee ভালো লাগছে ।
' দেবাশিস দাশগুপ্ত ' নামটা কতদিন পরে দেখলাম । গ্রুপ থিয়েটারকে কি ভালোবাসতেন , মানুষটা !!!
LikeShow More Reactions · Reply · 2 · 16 October at 14:25 · Edited
Manage
Ranadhir Das Gupta
Ranadhir Das Gupta khub valo lagche,
LikeShow More Reactions · Reply · 1 · 16 October at 15:00
Salil Sarkar প্রবুদ্ধ আগের কয়েকটি পর্বে মনোযোগী হলে এই ভুল হোতো না তোর।সেদিন কলামন্দির মঞ্চে রাজা অয়দিপাউস আমন্ত্রিত শো ছিল।নিচের প্রেক্ষাগৃহে কারিগরি ত্রুটির কারণে সে শব্দ ভেসে আসছিল।
উত্তরমুছুনশম্ভু মিত্র, সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এরা সবাই আকাদেমি মঞ্চে দেখতে এসেছিলেন।বোম্বে থেকে বাসু চ্যাটার্জি এসেছিলেন অমিতাক্ষর দেখতে রঙ্গনা মঞ্চে।লিখব এ সবই লিখব।শণৈঃ শণৈঃ।
LikeShow More Reactions · Reply · 1 · 15 October at 09:55
Manage
Dilip Banerjee replied · 2 Replies
Dilip Banerjee
Dilip Banerjee লেখাটা থমকে গেল !!
LikeShow More Reactions · Reply · 14 October at 23:10
Manage
Salil Sarkar
Salil Sarkar ঠিকই ধরেছেন।কারিগরি ত্রুটি শেষ করতে দিচ্ছে না।
LikeShow More Reactions · Reply · 14 October at 23:30
Manage
Prabuddha Mitra
Prabuddha Mitra শম্ভু মিত্র প্রথম শো তে এসেছিলেন কি ? যদ্দুর মনে পড়ছে প্রথম শো'র প্রথম সারি আলোকিত করেছিলেন মোহিত দা( চট্টোপাধ্যায় ),নীলকন্ঠ সেনগুপ্ত ও বিভাস দা ( চক্রবর্তি )। 'অয়দিপাউস' এসেছিলেন আকাদেমীর প্রথম শো তে।সেটা সম্ভবত চার বা পাঁচ নম্বর শো। প্রথম শো শেষ হতেই এই প্রযোজনা সম্পর্কে কোলকাতার বিদগ্ধ মহলের জন্য দেওয়াল লিখন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।
LikeShow More Reactions · Reply · 15 October at 00:26 · Edited
Manage
Arup Midya
Arup Midya darun. Khub valo lagche. Ekta jyanto itihas porchi.
LikeShow More Reactions · Reply · 15 October at 12:43
Samir Das " অমিতাক্ষর " আমি জীবনেও ভুলবো না l আপনি সেই সোনার দিনগুলো ফিরিয়ে দিচ্ছেন l অসংখ্য ধন্যবাদ l
উত্তরমুছুনLike · Reply · 1 · 13 October at 08:55
Manage
Neelava Chattopadhyay
Neelava Chattopadhyay darun salil da.
Like · Reply · 1 · 12 October at 22:12
Manage
Ambar Champati
Ambar Champati খুব সুন্দর।
Like · Reply · 1 · 13 October at 00:53
Manage
Subhendu Banerjee
Subhendu Banerjee চমৎকার।
Like · Reply · 1 · 12 October at 22:53
Prabuddha Mitra প্রথম কথা, শুধু থিয়েটার দল কেন যে কোনো সংগঠনের স্যোশাইটি রেজিষ্ট্রেশনের শর্তই হলো প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি, ট্রেসারার ইত্যাদি ইত্যাদি থাকা বাঞ্ছনীয়।কিন্তু থিয়েটার দল বিশেষ করে ঐ সময়ের দলগুলো ভীষণভাবে আন্তর্জাতিক কমিউনিষ্ট পার্টির গঠনতন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত ছিলো।স্থানীয় নিয়মে সরকারি নথিভুক্তিকরণ আর কমিউনিষ্ট গঠনতন্ত্র অনুযায়ী 'প্রেসিডিয়াম'- এ দুয়ের মিশ্র পাকে একটু গোলমাল তো থাকবেই। এর ওপর আর একটা লেবেল ছিলো 'অ্যান্টি ডিরেকটরস' থিয়েটার।এতো আঁটোসাটো লোহাকামরার কোন্ ফাঁকটা দিয়ে যে অহং এর বেশে সাপটা ঢুকলো সেই গবেষণায় এখন না যাওয়াই ভালো।কারণ, এতে ত্বিষাম্পতির জীবনকথা হোঁচট খেতে পারে।তার চে বরং এই প্রজন্ম এটা জানুক যে নাটকের কুশীলবেরা তখন কতোটা নিষ্ঠা ও একাগ্রতা দিয়ে নিজের নিজের কাজটা করেছিলো।প্রতিটা কাজই যেহেতু এক একটা ইঁট গাঁথা তাই গোটা সৃষ্টিটাই যৌথ।এই সারকথাটাই আসলে গ্রুপ থিয়েটারের নির্যাস।সেটা ঠিকঠাক হয়েছিলো বলেই ত্বিষাম্পতির জীবন উৎরে গিয়েছিলো। নাটক ও মঞ্চভাবনা একজনের, অভিনয় ভাবনা একজনের, মঞ্চনির্মাণ আর একজনের, শব্দ প্রক্ষেপণে শ্রীপতি দাস, মেক আপে শক্তি সেন,আলোয় ঘোষ দা এবং প্রত্যেক চরিত্রাভিনেতা ও সমস্ত পার্শ্ববন্ধুরা - সকলে মিলে একটা দল, একটা সমবেত সৃষ্টিতে উদ্ভাসিত হয়েছিলো ত্বিষামের জীবন। যেখানে "ছুতোরে"র ঠুকঠাক আর শ্যামবাজারের 'শ' সবই ছিলো নিখুঁত মাপা ও এককথায় খাপে খাপ। তাই ত্বিষামের জীবন দর্শকদের হাততালি ও গা ঘিনঘিনে সমৃদ্ধ হয়েছিলো।
উত্তরমুছুনকথা আরো চলতে থাকুক, চলতে থাকুক...
Like · Reply · 2 · 12 October at 10:45 · Edited
Manage
Salil Sarkar
Salil Sarkar আলো শ্রীপতিদা(দাস)নয়।ওটা আকাদেমির ঘোষদা হবে।শ্রীপতিদা ছিল ধ্বনি ও শব্দ প্রক্ষেপণে।সে কথায় আসব।
ভাই প্রবুদ্ধ এখন বাংলা নাট্যে যে ভরা কোটাল ও ষাঁড়া-ষাঁড়ির বাণ এসেছে যা শান্তিনিকেতনে বসেই শুনতে পাচ্ছি এবং এও পড়ছি
"যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি বাড়ি যায়
তদ্যপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়!"
আমি সেই নিত্যানন্দ রায় গুরুদের পাশে যাদের বেদীতলে তারা উঠে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাদের কথা ও কারণ না লিখলে ইতিহাস যে গুমরে কেঁদে মরবে ভাই।
মতামত ও উৎসাহ দেবার জন্য ধন্যবাদ।
Like · Reply · 2 · 12 October at 09:18
Manage
Prabuddha Mitra
Prabuddha Mitra ঠিক করে দিলাম ভুলগুলো।
হ্যাঁ, সব কথাই একে একে আসুক।কিন্তু সেদিনকার 'নিত্যানন্দ' দের কান অবধি সবটা পৌঁছচ্ছে কী না জানিনা ভাই।ফে বু তে তেনারা আসক্ত হলে তবেই তো সিদ্ধি।
Like · Reply · 12 October at 10:45
Manage
Salil Sarkar
Salil Sarkar তাদের কানে পৌঁছনোর দায়িত্ব নিইনি।ইতিহাসের দায়বদ্ধতা আর নাট্যগবেষকের দায়িত্ব থেকেই লিখে চলেছি আজীবন।কতটা নিরপেক্ষ বা আদপেই নিরপেক্ষ থাকব কি না সেটা তর্কসাপেক্ষ।
Like · Reply · 2 · 12 October at 11:08