স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন
আমাদের সময়ে আজকের কালের মতো রেজাল্ট কেউ দুঃস্বপ্নেও ভাবত না।যারা ভালো
রেজাল্ট করত কি ফেল করত সবাই স্কুলের শিক্ষাকেই যথেষ্ট মনে করত।বাবা-মাও পয়সা
থাকলেও ছেলের পিছনে(মেয়ের পিছনে টাকা খরচ সে তো বিয়ের সময়)টাকা খরচ অহেতুক
ভাবতেন।তাহলে স্কুলের মাস্টাররা কী করালেন?আর স্কুলের টিচাররাও সের(ক)ম মনে করলে
সেই সেই ছেলেদের বাড়িতে ডেকে আলাদা করে পড়াতেন বিনি পয়সায়।এখন এক একটি ছাত্র বা
ছাত্রী পিছু এক একটি সাব্জেক্টে এক থেকে দু-জন শিক্ষক বাধ্যতামুলক।তা বাদে
টিউটোরিয়াল হোম।আচ্ছা তাহলে স্কুলে কি পড়ানো হয়?কী পড়ানো হয়?আর ছেলে মেয়েরাই বা
এতো পড়াশোনা মগজে রাখছে কী করে?এখন শুনেছি ‘আই কিউ’ বেড়েছে।বেচারা রবীন্দ্রনাথ আর
আইনস্টাইন,ডারউইন আর অমর্ত্য সেন।
আমাদের কালে থার্ড ডিভিসনে পাশ করে ডাক্তারি পড়া যেত।ডাক্তার ইঞ্জিনিয়র হতে
আলাদা সাধের প্রয়োজন হোতো সাধ্যের নয়।এখন জয়েন্ট এক্সাম দিতে হয়।তার জন্যে বিশেষ
প্রশিক্ষন নিতে হয়।বিশেষ টোকাটুকিও শিখতে হয়।
টোকাটুকির টেকনোলজিটা এখন যেভাবে উন্নত হয়েছে আমাদের কালে সে রকম ছিল না।তখন
থিন এরারুট বিস্কুট,জাপানি পাখার স্টাইলে টুক্লি,গ্রামে-গঞ্জে শালপাতা-বটপাতা আর
সারা বাঙলায় মেয়েদের শাড়ির ভাঁজ,শীতকাল হলে অতিরিক্ত সুবিধা শীতের রাপার(নক্সা কাটা হোক নাই
হোক)।সাতের দশকে তার সংগে যোগ হয়েছিল (ছেলে হলে)টেবিলে একটা মস্ত ছোরা গেঁথে রাখা
আর(মেয়ে হলে)টেবিলে ঝুঁকে পড়ে লেখা যাতে মাস্টারমশায়ের চিত্তে চাঞ্চল্য জাগে।এর
মধ্যে আমার মতো ক্যাবলাদের আর যথার্থ ভালো ছেলে-মেয়েদের পরীক্ষা দেওয়াটা যে কী
কঠিন কাজ ছিল ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন।
আমি উচ্চ-মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছিলাম বাহাত্তরের
উত্তাল সময়ে।তখন দেশজুড়ে গণ-এর কাল।গণহত্যা,গণকৃষ্টি পাশাপাশি গণচেতনা,গণনাট্য
আন্দোলন,নবনাট্য ধারা।তখনও গণপিটুনি,গণধর্ষণ,গণ-দলদাস প্রক্রিয়া চালু হয়নি।যদিও
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রহসন চালু হয়ে গেছে।
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখছেন “ছেলে গেছে
বনে”,কবি শংখ ঘোষ লিখছেন “হাস পাতালে বলির বাজনা”।সমর সেন “ফ্রন্টিয়ার” পত্রিকা প্রকাশ করছেন ইংরাজিতে কিন্তু কবিতা লেখায় চরম
অনীহা তার।এর মাঝে সরোজ দত্ত উধাও হয়ে গেলেন এক উত্তম ভোরে।কবি বিষ্ণু দে লিখছেন
“এ অন্ধকারে কী দেখ সুরঙ্গমা”।এনকাউন্টারে নিহত লাশ পাচার হচ্ছে রাতের
অন্ধকারে।মকবুল ফিদা হুসেন ভারত মাতারূপী ইন্দিরা গান্ধি।কলকাতার যুব নেতারা তাকে
বলছেন “এশিয়ার মুক্তিসূর্য”।দেওয়ালে দেওয়ালে “চীনের
চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান” কিম্বা ভুল বানানে বন্দুকের নল থেকে ক্ষমতা বেড়িয়ে
আসছে।
তখন মুখে মুখে চারমিনার,মূর্তিতে আলকাতরা কি
হাতুড়ির ঘা।স্লোগানে চারু মজুমদার।সারা বাংলা তখন নকশাল বাড়ি,সারা দেশ তখন
ডেবরা,গোপীবল্লভপুর আর শ্রীকাকুলাম।সকালে “যুগান্তর”, “অমৃত বাজার পত্রিকা”,
“আনন্দ বাজার পত্রিকা” “স্টেটসম্যান” আর “কালান্তর”।সন্ধ্যেবেলা “গণশক্তি”।হাতে হাতে “দেশহিতৈষি”।চুপিচুপি “দেশব্রতী”।
যে
ভিখিরিপতি গ্রামে এতোদিন দিনে রাতে মিটিং করেছেন অজয় মুখার্জি কি বিশ্বনাথ মুখার্জি এখন সেখানেই নাকি হঠাৎ হঠাৎ আসছেন
সন্তোষ রাণা কি কানু
সান্যাল। কতোটা সত্যি কতোটা অতিরঞ্জন কেউ জানে না।যারা
জানে তারা গোপন আস্তানায়।গুজব ছড়াচ্ছে আগুনের চেয়েও
দ্রুত গতিতে।ঠিক যেমন পরীক্ষার কয়েকদিন আগেই ওই ভিখিরিপতি গ্রামে চলে এলো
উচ্চ-মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র।মুখে মুখে সারা পাড়া,সারা গ্রাম রটে গেল সেই বার্তা।আর
আমরাও পড়া ছেড়ে সব্বাই ছুটে বেড়ালাম সেই গুজবের পিছন পিছন।কেউ দেখেনি,শুধু শুনেছে।
সত্যি বলতে কি আমি একটু কম ছুটেছিলাম কারণ আমি নিশ্চিত জানতাম এই উচ্চ
মাধ্যমিক আমার শেষ পরীক্ষা।এই আমার শেষ পড়াশোনা।পরীক্ষার শেষ হতেই আমার গলা ধরে
গেল, পড়ে নয় আর পড়তে হবে না এই আনন্দে।আমার যে তখন আর্ট কলেজে যাবার সব প্রস্তুতি
সারা।তখন কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে পড়াতেন আমাদের গ্রামের বিনয়(ঘোষ)জেঠু।তিনি
আমার ছবি আঁকা দেখে বাবাকে এই প্রস্তাব দিলেন।বাবা নিমরাজি।আমি নিয়মিত বিনয় জেঠুর
বাড়ি যাচ্ছি,শিখছি,ভুল শুধরে নিচ্ছি.........কিন্তু বিধাতা(!)যে তখন অলক্ষ্যে
হাসিতেছেন কে জানত?কাগজে ভর্তির বিজ্ঞাপন বেরোতেই সক্কাল সক্কাল হাতে পেপার কাটিং
নিয়ে বিনয়জেঠু হাজির। বাবা বল্লে –“হবেনা বিনয়দা,এতোবড় সংসারে এতো ছেলের পড়াশোনার
খরচ সাম্লে ওর খরচ কুলিয়ে উঠতে পারব না”।বিনয়জেঠু চা না খেয়ে হাতে কাগজের টুকরোটা
নিয়ে বিড়বিড় করে “ভুল করলে নিরঞ্জন,বড়ো ভুল করলে” বলতে বলতে ফিরে গেলেন।আমি ভর্তি হয়ে
গেলাম মান্তুদি,শংকরীদার তাম্রলিপ্ত মহাবিদ্যালয়ে।বিষয় নিতে বাধ্য হলাম ইকনমিক্স-এ অনার্স।
যারা চির-উন্মাদ তারা কি নতুন করে পাগল হয়?শংকরীদা ভুল করেছিল। যারা
চির-প্রেমিক তারা কি প্রেমে ঘা খেলে আত্মহত্যা করে?আমি মান্তুদির মতো তাই সুইসাইড
করলাম না।আমি পালিয়ে বাঁচতেও চাইলাম না।পালিয়ে বাঁচা যায় না।আমি তাই
কিছুদিনের জন্যে ওই ভিখিরিপতি গ্রামের বৃক্ষ-লতায় গুটিপোকা হয়ে গেলাম।
Piyali Palit তার পর ?
উত্তরমুছুনLike · Reply · 24 May at 00:14
Snehamoy Chakraborty
Snehamoy Chakraborty Apni Ki Amar Katha sunlen dada? Eto valo lekhagulo.....
Like · Reply · 24 May at 01:49
Sarmistha Bandyopadhyay
Sarmistha Bandyopadhyay Aro likhun....lekhata ses korun.
Like · Reply · 24 May at 07:04
Manisha Banerjee
Manisha Banerjee Apnar lekha mugdho hoye pori aar dui chokhey jal namey. Sarkari school eyr head didimoni hoyechilam ei bhebey jey ekhaney hoito tyamon number eyr khela thakbey na...ami ankey khub kancha barabar....kintu ekhaneyo "valo" meyera school ashey na...tuition...See more
Like · Reply · 24 May at 15:15
Salil Sarkar
Salil Sarkar Manisha Banerjee আপনারা যে আমার আবোল তাবোল পড়ছেন আর মতামত দিচ্ছেন এই আস্কারায় আমি যে আরো সাহসী হয়ে উঠছি।এখন বাংলা মাধ্যমে পড়াটা হীণ মণ্যতার কাজ।তার মধ্যে আপনারা যারা একা কুম্ভ আর কতোদিন এই ন ক ল বুদি গড় রক্ষা ক রতে পারবেন আমি জানিনা।শিক্ষাটাকে শিক(খা)কাবাব ক রে দেওয়া হোলো।এখন মুড়ি মুড়কির এক দ র.........তবু হার মানবেন না।হাল ছাড়বেন না।
Like · Reply · 4 · 25 May at 00:01