নিশিদিন ভরসা রাখিস......
অধ্যাপনা(অতিথি)করার
জন্যে কলকাতার শিল্প ছেড়ে ছুটে ছিলাম শান্তিনিকেতনে। যাওয়ার কথা ছিল অনেক আগেই
যদিও কোনও কোনও আমার অতি হিতাকাংখী বিষয়টাকে প্রলম্বিত করে যাওয়াটাকেই আটকে দিতে
চেয়েছিল।কিন্তু আমি যে তার আগেই শুনেছিলাম তার গান...... ‘নিশিদিন ভরসা রাখিস হবেই
হবে/ওরে মন হবেই হবে।/যদি পণ করেই থাকিস সে পণ যে তোর রবেই রবে......।ওরে
মন......’।
পৌষ মেলার ভাঙা হাটে যখন
বউ মেয়ে নিয়ে পৌছলাম আচম্বিতে হাতে এলো কাংখিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার যা ইস্যু
হয়েও কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাইছিলেন না কেউ।সেই তিনিই লেটার হাতে ধরিয়ে আমার বউ
মেয়েকে ভাঙা মেলার বাসি জিলিপি খাইয়ে বলেছিলেন-“সলিল এলে যখন ভবনে আমার হাতটাকে
শক্ত কোরো” তার উত্তরে আমি বলেছিলাম-‘ভাই গো আমার হাত তো আগেই মুচড়ে ভেঙে দিয়েছ।
এখন এই ভাঙা হাতে তোমার হাত কী করে শক্ত করি ভাই’?তার পর থেকে প্রতি ভোরে শুরু
হোলো যুদ্ধ......ছেলেদের পড়ায় মন বসানো।সাকসেসফুল হলাম কিন্তু তেনাদের মন জোগানোর
কাজটা পারলাম্না সেই হেতু তাড়া খাওয়ার বীজটা নিজেই পুতলাম।তাতে জল ঢাললাম নিজেই
ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে নানান প্রযোজনার কাজ করে। কে যে মাথার দিব্যি দিয়েছিল?ভুল
বললাম সেই কোন শৈশব থেকেই পায়ের তলায় পড়েছিল সরষে আর হাতের তালুতে
হাতুড়ি-বাটালি-তুলি।শীতের ভোরে শালবীথি দিয়ে চলার কালে পাঠ ভবনের ছেলে-মেয়েদের
দেখতে দেখতে ভাবতাম আমার শৈশব যদি এমন হোতো?কলা-ভবনের চীনা বটের বেদিতে বসে ভেবেছি
এখানে কি আমার এই ভাবেই আসার ছিল?
আগে যখন এসেছি বর্ষা কি বসন্তে
বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়কে কাজ করতে দেখেছি। কিংকরদাকে দেখেছি।শান্তিদেব ঘোষ কে
নাচতে গাইতে দেখেছি।কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরেলা স্বরে আর নিলীমা সেনের কন্ঠের
আবিলতায় আবিষ্ট হয়েছি ঠিকই কিন্তু কলকাতার কাজ ছেড়ে এখানে আসব এমনটা মনে
জাগেনি।ভাগ্যিস মনে হয়নি তাহলে তো এতদিনে ভবনের শতাব্দ প্রাচীন জামগাছের মতো
মৌরসীপাট্টার শিকড় গেড়ে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আশ্রমিক হয়ে যেতাম।তালধ্বজের তাল
গাছের মতো এক ঠ্যাংয়ে খাড়া থাকতাম হয়তো কিন্তু সে তাল গোরুতেও চিবোত না।সে সময়
গোয়াল পাড়ার গোরু আর ধোপাদের গাধার মতো চরে বেড়াতাম পায়ে হেঁটে কি সাইকেলে ভুবন
ডাঙা থেকে পারুল ডাঙা।ওখানকার ভূমিপুত্রদের জমি ছলে-বলে-কৌশলে হস্তগত করে বাড়ির নাম
রাখতাম “ছল-চাতুরী” কি “ছত্রছায়া”।আমার মেয়ে পড়ত ওখানেই। আমার ছেলে প্রতিভা হয়ে
জন্ম নিয়ে নিষিদ্ধ নেশায় ডুবে ভুবন ডাঙাকেই ভাবত বিশ্ব ভুবন।আমার স্ত্রী বছরে
একবার সখের থিয়েটার করত নয়ত নৃত্যশ্রী হয়ে খুন্তি নাড়ত আর হনুমান তাড়াত।মেয়ের নাম
রাখতাম ‘বনবীথি’ ছেলের নাম ‘পুণ্যবান’ আর স্ত্রীকে আদর করে ডাকতাম ‘মেঘমালিকা’।অহো
কী সুখের জীবন!যে জীবন আমার নয়।তাই ‘না’য়ের খাতায় নাম লিখিয়ে নানান নায়ে পাল তুলে
কাজ করলাম ইচ্ছে মতো।
গ্রীষ্মের দাব দাহে সবাই
যখন ছুটি কাটাতে শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস ধরে শান্তিতে কলকাতার বাসায় ফেরেন আমি তখন
ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে প্রোডিউসারের টাকায় ‘অনার কিলিং’ ছোট ছবি বানালাম।সাংবাদিক
ভাইয়েরা সে সংবাদ প্রকাশ করলেন। আমি বেশ কিছু শত্রু বানিয়ে ফেললাম ট্রাই ওয়ান গেট
ওয়ান ফ্রিয়ের মতো।কলা ভবনের চাতালে স্ক্রিনিং হোলো আমার দুটি ছোটো ছবি ‘অনার
কিলিং’আর ‘লিটিল এঞ্জেল’ কলা ভবনের অধ্যাপক বন্ধু ও ছাত্র-ছাত্রীদের
সৌজন্যে।মানিদার মতো শিল্পী স্থির হয়ে বসে দেখলেন।আরো কিছু শত্রু প্যানেলে নাম
লেখালেন।কাজের ফিরিস্তি দেবার বাসনায় বলছি না।থেমে না থাকার গোয়ারতুমির কথা কবুল
করছি মাত্র।
এক শীতে
বকখালি,ফ্রেজারগঞ্জ,হেনরি আইল্যান্ড গিয়ে বানালাম ‘লিটিল মারমেড’ তার জন্যে কথাকলি
নৃত্যের মুকুন্দন কে তুলে নিয়ে গেলাম।মুকুন্দন বিনা পারিশ্রমিকে কি অপূর্ব কাজটা
করেছিল।এই শান্তিনিকেতনেই জন্ম হোলো আমার সন্তান “পোস্টমর্টেম পারফরমেন্সে”র.........
‘ভাতজোছনা’, ‘উৎসারিত বর্ণমালা’,‘অজাতক’,‘অজহলিংগ’, ‘চর্যাশ্রম’.........হায় কাকে
দোষ দেব!আমি জেনেশুনে বিষ করেছি পান। শান্তিনিকেতনের বহু মানুষ আমাকে আপন করে
নিলেন।শান্তিনিকেতনের কিছু ‘রাবীন্দ্রিক মুটে’ আমাকে আপন না করার পণ নিয়ে দিন-রাত
না ঘুমিয়ে ফলপট্টি আর ফার্স্ট গেটে প্ল্যান কষতে থাকল।আমি তখন দিনের শেষে খুদ-কুড়ো
খেয়ে পরম তৃপ্তিতে নিদ্রা যেতাম।
শৈশবে শান্তিনিকেতন ছিল
আমার স্বপ্ন।যৌবনে ছিল দূরের পথিক আর এই পড়ন্তবেলায় শান্তিনিকেতন হোলো অন্যের
দুরারোগ্য ব্যধি চিকিৎসার স্যানেটোরিয়াম যেখানে আমি ওয়ার্ডবয়।
Asish Maji ki j bolbo bughta parchi na......
উত্তরমুছুনLike · Reply · 49 mins
Samir Mitra
Samir Mitra Apnake keoi bhole.ni....pl. come srijani.silpo gram (EZ C C ),santiniketan.......
Like · Reply · 40 mins
Prabuddha Mitra
Prabuddha Mitra সেই পুরোনো কোনো এক বসন্ত উৎসবের ভোরের কথা মনে পড়ছে।সারা রাত ট্রেনে কোনো রকমে ঠাঁই নিয়ে ভোরে কলকাতা থেকে আসা তিন সদ্য যুবক শান্তির এক ছোট্ট নিকেতন হিসেবে বেছে নিয়েছিলো বিশ্বভারতীর নাটমন্দিরের দালান। তারপর একটু বেলা গড়াতেই শুরু হয়েছিলো রঙের মিছিলে বসন্তের অনাস্বাদিত হাতছানি..."খোল দ্বার খোল..."।সেই বোধহয় স্বপ্ন দেখার শুরু...তারপর এই আজ খেরোর খাতা..
Unlike · Reply · 1 · 14 mins · Edited
Salil Sarkar
Salil Sarkar তোর মনে আছে?তুই,আমি আর প্রসূন......।।তবে ওটা নাট্মন্দির ছিল না।এখানে সংগীতভবনের যে ছবি আছে তার ডান দিকে সেদিন বসেছিলাম।সেদিনও অঝোরে ঝরছিল।
Like · Reply · 1 · 10 mins
Salil Sarkar
Sarmistha Bandyopadhyay Ei lekhata khub jaruri.aro likhun khule likhun alo hoey bose achhe je kalo take ebhabei chenan bhabisat prajanmo ke.
উত্তরমুছুনLike · Reply · 2 hrs
Salil Sarkar
Salil Sarkar ধন্যবাদ।তোমাদের দেওয়া সাহসেই আমি সাহসী।যদিও এইসব অকপট লেখনীর কারণে অনেক প্রচ্ছন্ন হুমকির সম্মুখীন হোতে হচ্ছে।না তাতে আমি ভীত একটুও নয়।যারা এসব করে তারা আদতে ভীত ও শংকিত।আর আমাদের পাশে আছে অসংখ্য মানুষ।বিশেষ ভাবে আমার ছাত্র ছাত্রী।তাছাড়া তিনি ছিলেন,তিনি আছেন।তিনিই লিখেছিলেন-'হবে জয়,হবে জয়,হবে জয় রে/ওহে বীর,হে নির্ভয়'।
Like · Reply · Just now
Daliya Charulota Karmakar
উত্তরমুছুনDaliya Charulota Karmakar Dada egiye jan amra apnar pase always...
Like · Reply · 9 mins
Salil Sarkar
Write a reply...
Choose file
Salil Sarkar
Salil Sarkar আমি জানি ডালিয়া।তোমরাই আমার আশা,আমার ভরসা আমার প্রাণের আরাম।আত্মার শান্তি।
Just now